সাধারণতঃ ইতিহাসে খ্রিষ্টপূর্ব কয়েক শতক পূর্বের সময় থেকে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতকেই প্রাচীনকাল বা যুগ বলে ধরা হয়ে থাকে।তবে অঞ্চল ভেদে কালবিভাজনের তারতম্যও লক্ষ্য করা যায়।খ্রিষ্টীয় তেরো শতকের পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় দু’ হাজার বছরের সময়কে বাংলার প্রাচীন যুগ বলে ধরা হয়ে থাকে। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর উৎপত্তি বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, ভৌগোলিক অবস্থান এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। প্রাচীন বাংলা ছোট ছোট অনেকগুলো অঞ্চলে বিভক্ত ছিল, যেগুলোকে জনপদ বলা হতো
১. পুণ্ড্রঃ
বৃহত্তর বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশ বিশেষ। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলাের মধ্যে অন্যতম হলাে পুন্ড্র। বলা হয় যে, পুন্ড্র বলে একটি জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। বর্তমান বগুড়া, রংপুর, ও দিনাজপুর অঞ্চল নিয়ে এ পুন্ড্র জনপদটির সৃষ্টি হয়েছিল।পুন্ড্রদের রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়। মহাস্থানগড় প্রাচীন পুন্ড্র নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন।
২. বরেন্দ্ৰঃ
নাটোর,পাবনা, রাজশাহী বিভাগের উত্তর পশ্চিমাংশ, রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অংশ।
বরেন্দ্রী, বরেন্দ্র বা বরেন্দ্রভূমি নামে প্রাচীন বাংলায় অপর একটি জনপদের কথা জানা যায়।
এটিও উত্তরবঙ্গের একটি জনপদ। অনুমান করা হয়, পুরো একটি অংশ জুড়ে বরেন্দ্রর অবস্থান ছিল। বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার অনেক অঞ্চল এবং সম্ভবত পাবনা জেলাজুড়ে বরেন্দ্র অঞ্চল বিস্তৃত ছিল।
৩. বঙ্গঃ
ঢাকা, ফরিদপুর, বিক্রমপুর, বাকলা (বরিশাল)।
‘বঙ্গ একটি অতি প্রাচীন জনপদ। বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গ জনপদ নামে একটি অঞ্চল গড়ে উঠেছিল। অনুমান করা হয়, এখানে বঙ্গ’ বলে একটি জাতি বাস করতাে। তাই জনপদটি পরিচিত হয় ‘বঙ্গ’ নামে।
প্রাচীন শিলালিপিতে বঙ্গের দুইটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়—একটি বিক্রমপুর, আর অন্যটি নাব্য। বর্তমানে নাব্য বলে কোনাে জায়গার অস্তিত্ব নেই।
ধারণা করা হয়, ফরিদপুর, বাখেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীর নিচু জলাভুমি এ নাব্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাচীন বঙ্গ জনপদ ছিল খুব শক্তিশালী অঞ্চল। ‘বঙ্গ থেকে বাঙালি জাতির উৎপত্তি ঘটেছিল।
৪. গৌড়ঃ
মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। গৌড়’ নামটি সুপরিচিত হলেও প্রাচীনকালে ঠিক কোথায় গৌড় জনপদটি গড়ে উঠেছিল তা জানা যায়নি। তবে ষষ্ঠ শতকে পূর্ব বাংলার উত্তর অংশে গৌড় রাজ্য বলে একটি স্বাধীন রাজ্যের কথা জানা যায়। সপ্তম শতকে শশাঙ্ককে গৌড়ের রাজ বলা হতাে। এ সময় গৌড়ের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলায় ছিল এর অবস্থান। বাংলায় মুসলমানদের বিজয়ের কিছু আগে মালদহ জেলার লক্ষণাবতীকেও গৌড় বলা হতাে।
৫. সমতটঃ
বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল।
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বঙ্গের প্রতিবেশী জনপদ হিসেবে সমতটের অবস্থান। কেউ কেউ মনে করেন, সমতট বর্তমান কুমিল্লার প্রাচীন নাম। গঙ্গা-ভাগীরথীর পূর্ব তীর থেকে শুরু করে মেঘনার মােহনা পর্যন্ত সমুদ্রকূলবর্তী অঞ্চলকেই সম্ভবত বলা হতাে সমতট।
কুমিল্লা শহরের ১২ মাইল পশ্চিমে বড় কামতা এর রাজধানী ছিল। কুমিল্লার ময়নামতিতে কয়েকটি প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে। শালবন বিহার এদের অন্যতম।
৬. রাঢ়ঃ পশ্চিম বাংলার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং মেদিনীপুর জেলা।
৭. হরকূল বা হরিকেলঃ
চট্টগ্ৰাম, পার্বত্য চট্ৰগ্ৰাম, ত্ৰিপুরা, সিলেট। সপ্তম শতকের লেখকরা হরিকেল নামে অপর একটি জনপদের বর্ণনা করেছেন। এ জনপদের অবস্থান ছিল বাংলার পূর্ব প্রান্তে। মনে করা হয়, আধুনিক সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই জনপদ বিস্তৃত ছিল।
৮. চন্দ্ৰদ্বীপঃ
বরিশাল, বিক্ৰমপু্র, মুন্সীগঞ্জ জেলা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। প্রাচীন বাংলায় আরও একটি ক্ষুদ্র জনপদের নাম পাওয়া যায়। এটি হলাে চন্দ্রদ্বীপ। বর্তমান বরিশাল জেলাই ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূখণ্ড ও প্রাণকেন্দ্র। এ প্রাচীন জনপদটি বালেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল।
৯. সপ্তগাঁওঃ খুলনা এবং সমুদ্ৰ তীরবর্তী অঞ্চল।
১০. তাম্ৰলিপ্তঃ
মেদিনীপুর জেলা। হরিকেলের দক্ষিণে অবস্থিত ছিল তাম্রলিপ্ত জনপদ। বর্তমান মেদিনীপুর জেলার তমলুকই ছিল তাম্রলিপ্তের প্রাণকেন্দ্র। সপ্তম শতক থেকে এটি দণ্ডভুক্তি নামে পরিচিত হতে থাকে।
১১. রূহ্ম/ আরাকানঃ কক্সবাজার, মায়ানমারের কিছু অংশ, কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণা অঞ্চল।
১২. সূহ্মঃ গঙ্গা-ভাগীরথীর পশ্চিম তীরের দক্ষিণ ভূভাগ, আধুনিক মতে বর্ধমানের দক্ষিণাংশে, হুগলির বৃহদাংশ, হাওড়া এবং বীরভূম জেলা নিয়ে সূহ্ম দেশের অবস্থান ছিল।
১৩. বিক্রমপুরঃ মুন্সীগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল।
১৪. বাকেরগঞ্জঃ বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট।
[ছবি - প্রতীকী]
Note - অনলাইন সংগৃহীত কিছু কিছু লেখা
^Notification
@Ankita @Illusion @ANNA007 @Babai_43 @Ladywiththelamp @subsar @Oishika @Meghnad @Oishi @Tiktiki @InkyWhispers @Aurelía ʚїɞ @Saurabh Dariwala @misstti @Anshh3 @Anshhi
@Sumannnn @Saggi
১. পুণ্ড্রঃ
বৃহত্তর বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশ বিশেষ। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলাের মধ্যে অন্যতম হলাে পুন্ড্র। বলা হয় যে, পুন্ড্র বলে একটি জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। বর্তমান বগুড়া, রংপুর, ও দিনাজপুর অঞ্চল নিয়ে এ পুন্ড্র জনপদটির সৃষ্টি হয়েছিল।পুন্ড্রদের রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়। মহাস্থানগড় প্রাচীন পুন্ড্র নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন।
২. বরেন্দ্ৰঃ
নাটোর,পাবনা, রাজশাহী বিভাগের উত্তর পশ্চিমাংশ, রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অংশ।
বরেন্দ্রী, বরেন্দ্র বা বরেন্দ্রভূমি নামে প্রাচীন বাংলায় অপর একটি জনপদের কথা জানা যায়।
এটিও উত্তরবঙ্গের একটি জনপদ। অনুমান করা হয়, পুরো একটি অংশ জুড়ে বরেন্দ্রর অবস্থান ছিল। বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার অনেক অঞ্চল এবং সম্ভবত পাবনা জেলাজুড়ে বরেন্দ্র অঞ্চল বিস্তৃত ছিল।
৩. বঙ্গঃ
ঢাকা, ফরিদপুর, বিক্রমপুর, বাকলা (বরিশাল)।
‘বঙ্গ একটি অতি প্রাচীন জনপদ। বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গ জনপদ নামে একটি অঞ্চল গড়ে উঠেছিল। অনুমান করা হয়, এখানে বঙ্গ’ বলে একটি জাতি বাস করতাে। তাই জনপদটি পরিচিত হয় ‘বঙ্গ’ নামে।
প্রাচীন শিলালিপিতে বঙ্গের দুইটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়—একটি বিক্রমপুর, আর অন্যটি নাব্য। বর্তমানে নাব্য বলে কোনাে জায়গার অস্তিত্ব নেই।
ধারণা করা হয়, ফরিদপুর, বাখেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীর নিচু জলাভুমি এ নাব্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাচীন বঙ্গ জনপদ ছিল খুব শক্তিশালী অঞ্চল। ‘বঙ্গ থেকে বাঙালি জাতির উৎপত্তি ঘটেছিল।
৪. গৌড়ঃ
মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। গৌড়’ নামটি সুপরিচিত হলেও প্রাচীনকালে ঠিক কোথায় গৌড় জনপদটি গড়ে উঠেছিল তা জানা যায়নি। তবে ষষ্ঠ শতকে পূর্ব বাংলার উত্তর অংশে গৌড় রাজ্য বলে একটি স্বাধীন রাজ্যের কথা জানা যায়। সপ্তম শতকে শশাঙ্ককে গৌড়ের রাজ বলা হতাে। এ সময় গৌড়ের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলায় ছিল এর অবস্থান। বাংলায় মুসলমানদের বিজয়ের কিছু আগে মালদহ জেলার লক্ষণাবতীকেও গৌড় বলা হতাে।
৫. সমতটঃ
বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল।
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বঙ্গের প্রতিবেশী জনপদ হিসেবে সমতটের অবস্থান। কেউ কেউ মনে করেন, সমতট বর্তমান কুমিল্লার প্রাচীন নাম। গঙ্গা-ভাগীরথীর পূর্ব তীর থেকে শুরু করে মেঘনার মােহনা পর্যন্ত সমুদ্রকূলবর্তী অঞ্চলকেই সম্ভবত বলা হতাে সমতট।
কুমিল্লা শহরের ১২ মাইল পশ্চিমে বড় কামতা এর রাজধানী ছিল। কুমিল্লার ময়নামতিতে কয়েকটি প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে। শালবন বিহার এদের অন্যতম।
৬. রাঢ়ঃ পশ্চিম বাংলার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং মেদিনীপুর জেলা।
৭. হরকূল বা হরিকেলঃ
চট্টগ্ৰাম, পার্বত্য চট্ৰগ্ৰাম, ত্ৰিপুরা, সিলেট। সপ্তম শতকের লেখকরা হরিকেল নামে অপর একটি জনপদের বর্ণনা করেছেন। এ জনপদের অবস্থান ছিল বাংলার পূর্ব প্রান্তে। মনে করা হয়, আধুনিক সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই জনপদ বিস্তৃত ছিল।
৮. চন্দ্ৰদ্বীপঃ
বরিশাল, বিক্ৰমপু্র, মুন্সীগঞ্জ জেলা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। প্রাচীন বাংলায় আরও একটি ক্ষুদ্র জনপদের নাম পাওয়া যায়। এটি হলাে চন্দ্রদ্বীপ। বর্তমান বরিশাল জেলাই ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূখণ্ড ও প্রাণকেন্দ্র। এ প্রাচীন জনপদটি বালেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল।
৯. সপ্তগাঁওঃ খুলনা এবং সমুদ্ৰ তীরবর্তী অঞ্চল।
১০. তাম্ৰলিপ্তঃ
মেদিনীপুর জেলা। হরিকেলের দক্ষিণে অবস্থিত ছিল তাম্রলিপ্ত জনপদ। বর্তমান মেদিনীপুর জেলার তমলুকই ছিল তাম্রলিপ্তের প্রাণকেন্দ্র। সপ্তম শতক থেকে এটি দণ্ডভুক্তি নামে পরিচিত হতে থাকে।
১১. রূহ্ম/ আরাকানঃ কক্সবাজার, মায়ানমারের কিছু অংশ, কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণা অঞ্চল।
১২. সূহ্মঃ গঙ্গা-ভাগীরথীর পশ্চিম তীরের দক্ষিণ ভূভাগ, আধুনিক মতে বর্ধমানের দক্ষিণাংশে, হুগলির বৃহদাংশ, হাওড়া এবং বীরভূম জেলা নিয়ে সূহ্ম দেশের অবস্থান ছিল।
১৩. বিক্রমপুরঃ মুন্সীগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল।
১৪. বাকেরগঞ্জঃ বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট।

[ছবি - প্রতীকী]
Note - অনলাইন সংগৃহীত কিছু কিছু লেখা
^Notification
@Ankita @Illusion @ANNA007 @Babai_43 @Ladywiththelamp @subsar @Oishika @Meghnad @Oishi @Tiktiki @InkyWhispers @Aurelía ʚїɞ @Saurabh Dariwala @misstti @Anshh3 @Anshhi
@Sumannnn @Saggi