• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

♦️The EarBud♦️

Sherl0ck

Epic Legend
The EarBud

ফাঁকা হাইওয়ে গাড়ি ছুটছে ১০০-১২০কিমি/ঘণ্টা বেগে। অফিস থেকে ফিরছি ভোর তখন পাঁচটা হবে, ঘুমের ঝোঁক লেগে দুলছি গান বাজছে গাড়ি তে, আচমকা ব্রেক কষায় শরীর টা এগিয়ে এলো এমন ভাবে মনে হলো দেহ থেকে আত্মা পলায়ন হবে।
ড্রাইভার ছিল রাজস্থানি, ধমক দিয়ে উঠলাম " পাগল হে ক্যা?? ইতনা জোর সে আচানক ব্রেক কিউ মারা??? "
ড্রাইভার বলল, " সাব আগে এক্সিডেন্ট হুয়া হে সায়াদ ইসলিয়ে রোক দিয়া "
ওর কথা শুনে গাড়ির পিছনের সিটে বসে থাকা সুরেন্দার ও বলে উঠলো " চলিয়ে স্যার জানে ভি দিজিয়ে, কিউ আপনে কো পড়না হে ইয়ে সব মে "
আমি বললাম " পাগল কিসি কা মাদাদ করনে সে কুছ নহি বিগড়তা হে । "
বলার সাথে সাথেই আমি, ড্রাইভার, সাথে অগত্যা সুরেন্দার ও নেমে এগিয়ে এলাম রাস্তার ধারে এক কাত হয়ে পড়ে থাকা সাদা বলেরো গাড়িটার দিকে। প্রত্যেক টা কাঁচ ভাঙ্গা, রাস্তার উপর কাঁচের টুকরো গুলো শত শত হীরের মতো হয়ে পড়ে আছে , রাজস্থান এ সকাল হয় একটু দেরি তে তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। মোবাইলের ফ্ল্যাশ টা জ্বেলে এগোচ্ছিলাম কাঁচ গুলো সত্যিই যেনো হীরের মতো চকচক করতে লাগলো। গাড়ির ভিতরে ফ্ল্যাশ মারতেই আমরা তিন জনেই একসাথে অবাক হলাম কেউ নেই গাড়ির ভিতরে। যা অনুমান করে নেমেছিলাম তা ভুল ছিল আসলে এক্সিডেন্ট টা অনেক আগেই হয়তো ঘটেছিল আর ভিকটিম দের রেসকিউ করাও হয়তো হয়ে গিয়েছিল আমরা আমাদের গাড়ি তে ফিরতে যাবো , কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই রাস্তার ধারে চোখ যায় সুরেন্দার এর, ও কিছু বলার আগেই বমি করতে শুরু করে। ড্রাইভার দৌড়ে জল আনতে যায় আমাদের গাড়ি থেকে। তারপর তার বমি বন্ধ হয় জল দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে গাড়ি তে গিয়ে বসানো হয় তাকে। আমি আর ড্রাইভার দুজনে একবার কি মনে করে দেখতে যাই যে কি দেখে বমি করেছিল সে। গাড়ির যে পাশটায় সুরেন্দার দাড়িয়ে ছিল সেদিক টা যেতেই চমকে উঠলাম। দেখি ওইদিকের দুটো দরজার একটাও আস্ত নেই একটা গাড়ি থেকে আলাদা হয়ে রয়েছে তার সাথে একটা কাটা রক্তাত হাত সেই গাড়ির দরজার, নিচে চেপে রয়েছে আর সাথে ছড়িয়ে রয়েছে লাল রক্তত হীরে মানে ওই কাঁচের টুকরো গুলো।
ড্রাইভার আমাকে বলল, " স্যার চলিয়ে, ইয়া রেহনা সেহি নহি হোগা । "
অগত্যা আমিও সহমত হয়ে এগোতে গিয়ে কিছু একটা পায়ের নিচে শক্ত মতো চাপা দিয়ে ফেলি। ফ্ল্যাশ মেরে দেখতেই দেখি একটা সাদা রঙের Bluetooth AirBud, পাছে ড্রাইভার দেখে নেয়, আমি তাড়াতাড়ি করে ওটা পকেটে ভরে নিয়ে গাড়ি তে বসলাম। গাড়ি স্টার্ট দিতেই আবারও গান বেজে উঠলো, সুরেন্দার ততক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে। আমার মন পড়ে রইলো সেই EarBud টার উপর, যতক্ষণ না খুলে দেখছি জিনিসটা কেমন শান্তি নেই মনে আমার। আমরা আর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই হোটেল পৌঁছে গেলাম।

গাড়ি থেকে নেমেই হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে পকেটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বের করলাম EarBud টা, হাতে নিয়ে হোটেল এর আলো তেই দেখে খানিক টা অভক্তি লাগল , কারণ ওটায় রক্তের ছিটা লেগে শুকিয়ে গিয়েছিল। আমি রুমে গিয়ে ওটা জলে না ধুয়ে ওটায় বডিস্প্রে মেরে টিস্যু দিয়ে মুছে ফেললাম দুতিন বার। এবার বেশ লাগছে একটা স্ক্র্যাচ পড়লেও পুরো নতুন EarBud, SkullCandy এর logo টা দেখে আমার চোখ চক চক করে উঠলো। কানে দিয়ে মোবাইলের ব্লু টুথ কানেক্ট করে গান চালিয়ে ব্রাশ করতে চলে গেলাম। আহা মন টা গদো গদো হয়ে গেলো গান এর আওয়াজ কানে আসতেই । নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবান মনে হতে লাগলো আমার।
নাইট শিফট করায় এক রকম অভ্যেস হয়ে গেছে হোটেলে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাই না , ফিরে ব্রাশ করে , স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে একটু জেগেই থাকি, তারপর একেবারে সকাল সাতটায় ব্রেকফাস্ট করে তবে ঘুম দিই। আজ ও তাই করলাম স্নান সেরে মোবাইলে দেখি সাতটা বাজতে এখনো কুড়ি মিনিট বাকি আছে , আবারো Buds দুটো কানে লাগিয়ে গান শুনতে থাকি। কি মন গেলো ব্লুটুথ এ মডেল নাম দেখে google করলাম আর দাম টা দেখে আরো খুশি হয়ে গেলাম আমি। পুরোনো ব্লুটুথ Earphone টা একটু ডিস্টার্ব ই করছিল বটে। কখন গান শুনতে শুনতে চোখ লেগে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি টের পাইনি , চমকে উঠি একটা শব্দে। কানের কাছে কে যেন ভারী অথচ শুকনো গলায় বলে ওঠে অন্য ভাষায় কিছু একটা। উঠেই কান থেকে Earbuds দুটো খুলে ফেলি, দেখি সব normal সকালের আলো ফুটেছে, সময় দেখি আট টা বেজে গেছে , নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে চা টা খেতে খেতেই ফিরে আসি রুমে। তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করি, কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না, অগত্যা আবার Earbud কানে দিয়ে শার্লক হোমস এর গল্প শুনতে শুরু করি, The Adventure of the Engineer's Thumb , সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয় শার্লক যেনো স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের কোনো কাল্পনিক সৃষ্টি না সত্যি বর্তমান ছিলেন। এই সব ভাবতে ভাবতে কাহিনী শুনছি আর কখন আবার ঘুমিয়ে পড়েছি সে খেয়াল নেই, সারা রাত্রের ক্লান্তির ঘুমের অবশেষে অবসান ঘটলো আবার সেই অচেনা আওয়াজে কি বিভৎস ভয়ানক সেই আওয়াজ কান যেনো চিরে যায়। এবার বেশ কয়েকবার আওয়াজ টা repeat হয়েছিল।
কথা টা কিছুটা এরকম ছিল , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
আমি কেমন ঘাবড়ে যাই , প্রথমে তারপর মোবাইল চেক করে ভাবলাম online ads হতে পারে , স্ক্রিনে সময় দেখি , বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়েছিল স্নান করে লাঞ্চ সেরে আবার এসে কানে গুঁজে নিলাম earbud টা। 6000 টাকার জিনিস free তে পেয়েছি তার স্বাদ আলাদাই। অসম্পূর্ণ গল্প টা পুরোটা শুনতে লাগলাম , হাজার হোক বাঙালি তো দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর পিঠ বিছানা তে পড়লেই চোখ জুড়িয়ে ঘুম নেমে আসে। তবে এবার গল্প টা পুরোটা শুনে, তারপর soulful music চালিয়ে ঘুমিয়েছি।
হঠাৎ রুমের মধ্যে অন্ধকার টা একটু বেশি মনে হতে থাকে, জানালায় পর্দা ঢাকা ছিল তাই হয়তো। কান থেকে EarBud খুলতে গিয়ে ভিজে ভিজে অনুভূতি হয় কিছু, হাত দেখেই ভয়ে গা শিউরে ওঠে, দেখি হাতে চ্যাটচ্যাটে রক্ত । আমি চিৎকার করতে পারছিনা , কান থেকে খুলে EarBud দুটো ফেলে দি বিছানার নিচে দেখি বালিশের দুদিক ভিজে লাল স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে । কি করবো বুঝতে না পেরে জলের বোতল টা পাশের টেবিল থেকে নিতে যাই , তখন যা দেখি তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি কখনো। দেখি চোখের সামনে দাড়িয়ে এক ছায়ামূর্তি , যার একটা হাত নেই , একটা হাত আমার দিকে বাড়িয়ে , নিষ্প্রাণ চোখে যেনো চেয়ে আমার দিকে, সেই ছায়ামূর্তির চোখ আমি দেখতে পাইনি তবু মনে হচ্ছিল যেন লাল আভা দুটো কোটর থেকে ঠিকরে আসছে। আর সমানে সেই চেনা সুর বলে যাচ্ছে , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai..... Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."

আমার নিজের চিৎকারেই আমি জেগে উঠি , ঠাওর করতে পারি ভয়ানক স্বপ্ন ছিল পুরোটাই। খেয়াল হয় EarBud এর একটা কানে রয়েছে আর একটা বালিশের পাশে। কান থেকে খুলে নিয়ে বক্স এ ভরে দিলাম bud দুটো।

বিকেল তখনও রয়েছে , বলে রাখি এখানে সন্ধে হয় পুরোপুরি ভাবে রাত আটটায়। সময় তখন ছয় টা বেজে একুশ , কল লাগলাম ড্রাইভার কে , আজ একটু তাড়াতাড়ি আসতে বললাম, অন্যদিন ৮টা নাগাদ আসে যদিও। স্নান করে ready আমি , নিচে বসে চা খাচ্ছিলাম , আর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম , দেখি আমাদের food admin দাড়িয়ে রয়েছে। সে রাজস্থানি, নাম রমেশ সিং চৌহান। আমি ডাক দিলাম তাকে, চা খেতে বলে জিজ্ঞেস করলাম "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
এই কথার মানে কি ? যথারীতি সে বেশ মজা করেই বলল, ' আপনে কিসকা EarBud লে লিয়ে ' ।
আমি কথা টা ঘোরানোর জন্য সুরেন্দার এর নাম নিয়ে বললাম ওর EarBud আমার কাছে রয়ে গেছে তাই, ও বলছিল এটা।
মনে মনে বেশ ভয় পেতে লাগলাম, তবে কি সেই কাটা হাত , সেই রক্তের দাগ এসব ভাবতে ভাবতেই আমার ড্রাইভার, শ্বরবন এসে হাজির হাসি মুখে। ওর মুখ দেখলে কেনো জানিনা আমার বেশ হাসি হাসি পায়, সব ভুলে গাড়ি তে বসে গেলাম গান চলছে মাড়োয়ারি গান ।
আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো শ্বরবন , " স্যার আজ ইতনা জলদি কিউ বুলা লিয়া " ,

আমি বললাম , " আজ চলো ওহ মোবাইল শপ তুমহারা দোস্ত কা জিসকে পাস মে পিছলি বার স্ক্রীন গার্ড লাগায়া থা"
শ্বরবন বলল , " মোবাইল মে ক্যা হুয়া আপকা ? "
এবার অস্বস্তির সুরেই একটু রেগে বললাম , " চুপ চাপ চলো, অভি কোই সওয়াল জওয়াব নেহি "
দোকানে গিয়ে EarBud টা দেখলাম, আর মোবাইল এ google করে দেখলাম price টা , দোকানের ভাইয়া বুঝে গেলো ও বললো সোজা অর্ধেক দাম আমি বললাম না এর বদলে আমি নতুন earbud নিতে চাই। SkullCandy brand দেখে সেও সব চেক করে নিয়ে রাজি হয়ে গেলো, আমি ওই Earbud এর অর্ধেক দামের একটা নতুন BoAt এর EarBud কিনে নিয়ে গাড়ি তে বসে, অফিসে চলে গেলাম। সব স্বাভাবিক , পরের দিন ছিল রবিবার ভোরে হোটেলে ফিরেছি , মোবাইল ঘেঁটেছি , সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বেঘোরে ঘুমিয়ে গেছি।
কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানিনা ঘুম টা ভাঙলো একটা কল আসায়। কল টা তুলে মোবাইল কানে দিতেই, শ্বরবন কলের ওপার থেকে বলে উঠলো,
" স্যার আজ মে নেহি আউঙ্গা দুসরা ড্রাইভার আয়গা মেরি জগাহ , আপ admin সে বাত কর লো"

আমি বললাম , " কিউ তুমহে ক্যা হো গয়া "
উত্তরে যা বললো শ্বরবন আমার কান সেটা শুনতে প্রস্তুত ছিল না।
সে বলল , " আপনে কাল জিস দুকান সে নেয়া EarBud খরিদা উসকা death হো গয়া হে "
আমি কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলাম , " কাইসে হুয়া ইয়ে? "

শ্বরবন বলতে লাগলো, " উসকে কান সে বহত খুন নিকলা হে , উসকো কোই বিমারি থা শ্যায়াদ, ডক্টর নে চেক করকে বাতায়া কি, ব্রেইন হেমারেজ কা effect হে "
আমি কল টা রেখে , স্নান এ চলে গেলাম। দুপুরে কিচ্ছু খেতে ভালো লাগছিল না, দুমুঠো ভাত কোনো রকমে গিলে , রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
ঠিক করে ঘুমাতে পারছিলাম না, কেমন একটা অদ্ভুত চিন্তায় মন টা আনচান করতে লাগছিল। ভাবলাম একটু slow music শুনি, ঘুম এসে যাবে হয়তো।

এই ভেবেই বিছানার পাশের টেবিল থেকে নতুন EarBud টা হাতে নিয়ে box টা খুলতে গিয়ে যেই তাকাই দেখি সেই শুকনো কমলা রক্ত মাখা সেই সাদা SkullCandy - এর EarBud box টা আমারই হাতে................✍
Sherlock
কলমে - @Sherl0ck

তোমাদের কেমন লাগলো জানিও, অপেক্ষায় রইলাম তোমাদের মন্তব্যের, আগে আরো লিখবো।
@Anshhi @Bhoot @Anshh3 @Uronchondi @misstti @Ladywiththelamp @Ankita @Oishika @Meghnad @Oishi @Zer0 @Youknow @InkyWhispers @Doraemon @yoursumit07 @JISHU
 
Last edited:
The EarBud

ফাঁকা হাইওয়ে গাড়ি ছুটছে ১০০-১২০কিমি/ঘণ্টা বেগে। অফিস থেকে ফিরছি ভোর তখন পাঁচটা হবে, ঘুমের ঝোঁক লেগে দুলছি গান বাজছে গাড়ি তে, আচমকা ব্রেক কষায় শরীর টা এগিয়ে এলো এমন ভাবে মনে হলো দেহ থেকে আত্মা পলায়ন হবে।
ড্রাইভার ছিল রাজস্থানি, ধমক দিয়ে উঠলাম " পাগল হে ক্যা?? ইতনা জোর সে আচানক ব্রেক কিউ মারা??? "
ড্রাইভার বলল, " সাব আগে এক্সিডেন্ট হুয়া হে সায়াদ ইসলিয়ে রোক দিয়া "
ওর কথা শুনে গাড়ির পিছনের সিটে বসে থাকা সুরেন্দার ও বলে উঠলো " চলিয়ে স্যার জানে ভি দিজিয়ে, কিউ আপনে কো পড়না হে ইয়ে সব মে "
আমি বললাম " পাগল কিসি কা মাদাদ করনে সে কুছ নহি বিগড়তা হে । "
বলার সাথে সাথেই আমি, ড্রাইভার, সাথে অগত্যা সুরেন্দার ও নেমে এগিয়ে এলাম রাস্তার ধারে এক কাত হয়ে পড়ে থাকা সাদা বলেরো গাড়িটার দিকে। প্রত্যেক টা কাঁচ ভাঙ্গা, রাস্তার উপর কাঁচের টুকরো গুলো শত শত হীরের মতো হয়ে পড়ে আছে , রাজস্থান এ সকাল হয় একটু দেরি তে তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। মোবাইলের ফ্ল্যাশ টা জ্বেলে এগোচ্ছিলাম কাঁচ গুলো সত্যিই যেনো হীরের মতো চকচক করতে লাগলো। গাড়ির ভিতরে ফ্ল্যাশ মারতেই আমরা তিন জনেই একসাথে অবাক হলাম কেউ নেই গাড়ির ভিতরে। যা অনুমান করে নেমেছিলাম তা ভুল ছিল আসলে এক্সিডেন্ট টা অনেক আগেই হয়তো ঘটেছিল আর ভিকটিম দের রেসকিউ করাও হয়তো হয়ে গিয়েছিল আমরা আমাদের গাড়ি তে ফিরতে যাবো , কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই রাস্তার ধারে চোখ যায় সুরেন্দার এর, ও কিছু বলার আগেই বমি করতে শুরু করে। ড্রাইভার দৌড়ে জল আনতে যায় আমাদের গাড়ি থেকে। তারপর তার বমি বন্ধ হয় জল দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে গাড়ি তে গিয়ে বসানো হয় তাকে। আমি আর ড্রাইভার দুজনে একবার কি মনে করে দেখতে যাই যে কি দেখে বমি করেছিল সে। গাড়ির যে পাশটায় সুরেন্দার দাড়িয়ে ছিল সেদিক টা যেতেই চমকে উঠলাম। দেখি ওইদিকের দুটো দরজার একটাও আস্ত নেই একটা গাড়ি থেকে আলাদা হয়ে রয়েছে তার সাথে একটা কাটা রক্তাত হাত সেই গাড়ির দরজার, নিচে চেপে রয়েছে আর সাথে ছড়িয়ে রয়েছে লাল রক্তত হীরে মানে ওই কাঁচের টুকরো গুলো।
ড্রাইভার আমাকে বলল, " স্যার চলিয়ে, ইয়া রেহনা সেহি নহি হোগা । "
অগত্যা আমিও সহমত হয়ে এগোতে গিয়ে কিছু একটা পায়ের নিচে শক্ত মতো চাপা দিয়ে ফেলি। ফ্ল্যাশ মেরে দেখতেই দেখি একটা সাদা রঙের Bluetooth AirBud, পাছে ড্রাইভার দেখে নেয়, আমি তাড়াতাড়ি করে ওটা পকেটে ভরে নিয়ে গাড়ি তে বসলাম। গাড়ি স্টার্ট দিতেই আবারও গান বেজে উঠলো, সুরেন্দার ততক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে। আমার মন পড়ে রইলো সেই EarBud টার উপর, যতক্ষণ না খুলে দেখছি জিনিসটা কেমন শান্তি নেই মনে আমার। আমরা আর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই হোটেল পৌঁছে গেলাম।

গাড়ি থেকে নেমেই হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে পকেটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বের করলাম EarBud টা, হাতে নিয়ে হোটেল এর আলো তেই দেখে খানিক টা অভক্তি লাগল , কারণ ওটায় রক্তের ছিটা লেগে শুকিয়ে গিয়েছিল। আমি রুমে গিয়ে ওটা জলে না ধুয়ে ওটায় বডিস্প্রে মেরে টিস্যু দিয়ে মুছে ফেললাম দুতিন বার। এবার বেশ লাগছে একটা স্ক্র্যাচ পড়লেও পুরো নতুন EarBud, SkullCandy এর logo টা দেখে আমার চোখ চক চক করে উঠলো। কানে দিয়ে মোবাইলের ব্লু টুথ কানেক্ট করে গান চালিয়ে ব্রাশ করতে চলে গেলাম। আহা মন টা গদো গদো হয়ে গেলো গান এর আওয়াজ কানে আসতেই । নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবান মনে হতে লাগলো আমার।
নাইট শিফট করায় এক রকম অভ্যেস হয়ে গেছে হোটেলে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাই না , ফিরে ব্রাশ করে , স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে একটু জেগেই থাকি, তারপর একেবারে সকাল সাতটায় ব্রেকফাস্ট করে তবে ঘুম দিই। আজ ও তাই করলাম স্নান সেরে মোবাইলে দেখি সাতটা বাজতে এখনো কুড়ি মিনিট বাকি আছে , আবারো Buds দুটো কানে লাগিয়ে গান শুনতে থাকি। কি মন গেলো ব্লুটুথ এ মডেল নাম দেখে google করলাম আর দাম টা দেখে আরো খুশি হয়ে গেলাম আমি। পুরোনো ব্লুটুথ Earphone টা একটু ডিস্টার্ব ই করছিল বটে। কখন গান শুনতে শুনতে চোখ লেগে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি টের পাইনি , চমকে উঠি একটা শব্দে। কানের কাছে কে যেন ভারী অথচ শুকনো গলায় বলে ওঠে অন্য ভাষায় কিছু একটা। উঠেই কান থেকে Earbuds দুটো খুলে ফেলি, দেখি সব normal সকালের আলো ফুটেছে, সময় দেখি আট টা বেজে গেছে , নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে চা টা খেতে খেতেই ফিরে আসি রুমে। তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করি, কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না, অগত্যা আবার Earbud কানে দিয়ে শার্লক হোমস এর গল্প শুনতে শুরু করি, The Adventure of the Engineer's Thumb , সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয় শার্লক যেনো স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের কোনো কাল্পনিক সৃষ্টি না সত্যি বর্তমান ছিলেন। এই সব ভাবতে ভাবতে কাহিনী শুনছি আর কখন আবার ঘুমিয়ে পড়েছি সে খেয়াল নেই, সারা রাত্রের ক্লান্তির ঘুমের অবশেষে অবসান ঘটলো আবার সেই অচেনা আওয়াজে কি বিভৎস ভয়ানক সেই আওয়াজ কান যেনো চিরে যায়। এবার বেশ কয়েকবার আওয়াজ টা repeat হয়েছিল।
কথা টা কিছুটা এরকম ছিল , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
আমি কেমন ঘাবড়ে যাই , প্রথমে তারপর মোবাইল চেক করে ভাবলাম online ads হতে পারে , স্ক্রিনে সময় দেখি , বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়েছিল স্নান করে লাঞ্চ সেরে আবার এসে কানে গুঁজে নিলাম earbud টা। 6000 টাকার জিনিস free তে পেয়েছি তার স্বাদ আলাদাই। অসম্পূর্ণ গল্প টা পুরোটা শুনতে লাগলাম , হাজার হোক বাঙালি তো দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর পিঠ বিছানা তে পড়লেই চোখ জুড়িয়ে ঘুম নেমে আসে। তবে এবার গল্প টা পুরোটা শুনে, তারপর soulful music চালিয়ে ঘুমিয়েছি।
হঠাৎ রুমের মধ্যে অন্ধকার টা একটু বেশি মনে হতে থাকে, জানালায় পর্দা ঢাকা ছিল তাই হয়তো। কান থেকে EarBud খুলতে গিয়ে ভিজে ভিজে অনুভূতি হয় কিছু, হাত দেখেই ভয়ে গা শিউরে ওঠে, দেখি হাতে চ্যাটচ্যাটে রক্ত । আমি চিৎকার করতে পারছিনা , কান থেকে খুলে EarBud দুটো ফেলে দি বিছানার নিচে দেখি বালিশের দুদিক ভিজে লাল স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে । কি করবো বুঝতে না পেরে জলের বোতল টা পাশের টেবিল থেকে নিতে যাই , তখন যা দেখি তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি কখনো। দেখি চোখের সামনে দাড়িয়ে এক ছায়ামূর্তি , যার একটা হাত নেই , একটা হাত আমার দিকে বাড়িয়ে , নিষ্প্রাণ চোখে যেনো চেয়ে আমার দিকে, সেই ছায়ামূর্তির চোখ আমি দেখতে পাইনি তবু মনে হচ্ছিল যেন লাল আভা দুটো কোটর থেকে ঠিকরে আসছে। আর সমানে সেই চেনা সুর বলে যাচ্ছে , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai..... Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."

আমার নিজের চিৎকারেই আমি জেগে উঠি , ঠাওর করতে পারি ভয়ানক স্বপ্ন ছিল পুরোটাই। খেয়াল হয় EarBud এর একটা কানে রয়েছে আর একটা বালিশের পাশে। কান থেকে খুলে নিয়ে বক্স এ ভরে দিলাম bud দুটো।

বিকেল তখনও রয়েছে , বলে রাখি এখানে সন্ধে হয় পুরোপুরি ভাবে রাত আটটায়। সময় তখন ছয় টা বেজে একুশ , কল লাগলাম ড্রাইভার কে , আজ একটু তাড়াতাড়ি আসতে বললাম, অন্যদিন ৮টা নাগাদ আসে যদিও। স্নান করে ready আমি , নিচে বসে চা খাচ্ছিলাম , আর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম , দেখি আমাদের food admin দাড়িয়ে রয়েছে। সে রাজস্থানি, নাম রমেশ সিং চৌহান। আমি ডাক দিলাম তাকে, চা খেতে বলে জিজ্ঞেস করলাম "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
এই কথার মানে কি ? যথারীতি সে বেশ মজা করেই বলল, ' আপনে কিসকা EarBud লে লিয়ে ' ।
আমি কথা টা ঘোরানোর জন্য সুরেন্দার এর নাম নিয়ে বললাম ওর EarBud আমার কাছে রয়ে গেছে তাই, ও বলছিল এটা।
মনে মনে বেশ ভয় পেতে লাগলাম, তবে কি সেই কাটা হাত , সেই রক্তের দাগ এসব ভাবতে ভাবতেই আমার ড্রাইভার, শ্বরবন এসে হাজির হাসি মুখে। ওর মুখ দেখলে কেনো জানিনা আমার বেশ হাসি হাসি পায়, সব ভুলে গাড়ি তে বসে গেলাম গান চলছে মাড়োয়ারি গান ।
আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো শ্বরবন , " স্যার আজ ইতনা জলদি কিউ বুলা লিয়া " ,

আমি বললাম , " আজ চলো ওহ মোবাইল শপ তুমহারা দোস্ত কা জিসকে পাস মে পিছলি বার স্ক্রীন গার্ড লাগায়া থা"
শ্বরবন বলল , " মোবাইল মে ক্যা হুয়া আপকা ? "
এবার অস্বস্তির সুরেই একটু রেগে বললাম , " চুপ চাপ চলো, অভি কোই সওয়াল জওয়াব নেহি "
দোকানে গিয়ে EarBud টা দেখলাম, আর মোবাইল এ google করে দেখলাম price টা , দোকানের ভাইয়া বুঝে গেলো ও বললো সোজা অর্ধেক দাম আমি বললাম না এর বদলে আমি নতুন earbud নিতে চাই। SkullCandy brand দেখে সেও সব চেক করে নিয়ে রাজি হয়ে গেলো, আমি ওই Earbud এর অর্ধেক দামের একটা নতুন BoAt এর EarBud কিনে নিয়ে গাড়ি তে বসে, অফিসে চলে গেলাম। সব স্বাভাবিক , পরের দিন ছিল রবিবার ভোরে হোটেলে ফিরেছি , মোবাইল ঘেঁটেছি , সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বেঘোরে ঘুমিয়ে গেছি।
কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানিনা ঘুম টা ভাঙলো একটা কল আসায়। কল টা তুলে মোবাইল কানে দিতেই, শ্বরবন কলের ওপার থেকে বলে উঠলো,
" স্যার আজ মে নেহি আউঙ্গা দুসরা ড্রাইভার আয়গা মেরি জগাহ , আপ admin সে বাত কর লো"

আমি বললাম , " কিউ তুমহে ক্যা হো গয়া "
উত্তরে যা বললো শ্বরবন আমার কান সেটা শুনতে প্রস্তুত ছিল না।
সে বলল , " আপনে কাল জিস দুকান সে নেয়া EarBud খরিদা উসকা death হো গয়া হে "
আমি কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলাম , " কাইসে হুয়া ইয়ে? "

শ্বরবন বলতে লাগলো, " উসকে কান সে বহত খুন নিকলা হে , উসকো কোই বিমারি থা শ্যায়াদ, ডক্টর নে চেক করকে বাতায়া কি, ব্রেইন হেমারেজ কা effect হে "
আমি কল টা রেখে , স্নান এ চলে গেলাম। দুপুরে কিচ্ছু খেতে ভালো লাগছিল না, দুমুঠো ভাত কোনো রকমে গিলে , রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
ঠিক করে ঘুমাতে পারছিলাম না, কেমন একটা অদ্ভুত চিন্তায় মন টা আনচান করতে লাগছিল। ভাবলাম একটু slow music শুনি, ঘুম এসে যাবে হয়তো।

এই ভেবেই বিছানার পাশের টেবিল থেকে নতুন EarBud টা হাতে নিয়ে box টা খুলতে গিয়ে যেই তাকাই দেখি সেই শুকনো কমলা রক্ত মাখা সেই সাদা SkullCandy - এর EarBud box টা আমারই হাতে................✍
কলমে - @Sherl0ck

তোমাদের কেমন লাগলো জানিও, অপেক্ষায় রইলাম তোমাদের মন্তব্যের, আগে আরো লিখবো।
@Anshhi @Bhoot @Anshh3 @Uronchondi @misstti @Ladywiththelamp @Ankita @Oishika @Meghnad @Oishi @Zer0 @Youknow @InkyWhispers @Doraemon @yoursumit07 @JISHU @ANNA007
Onoboddho, R ekbar maj ratre lekha pore, gaa ta siure uthlo,
 
The EarBud

ফাঁকা হাইওয়ে গাড়ি ছুটছে ১০০-১২০কিমি/ঘণ্টা বেগে। অফিস থেকে ফিরছি ভোর তখন পাঁচটা হবে, ঘুমের ঝোঁক লেগে দুলছি গান বাজছে গাড়ি তে, আচমকা ব্রেক কষায় শরীর টা এগিয়ে এলো এমন ভাবে মনে হলো দেহ থেকে আত্মা পলায়ন হবে।
ড্রাইভার ছিল রাজস্থানি, ধমক দিয়ে উঠলাম " পাগল হে ক্যা?? ইতনা জোর সে আচানক ব্রেক কিউ মারা??? "
ড্রাইভার বলল, " সাব আগে এক্সিডেন্ট হুয়া হে সায়াদ ইসলিয়ে রোক দিয়া "
ওর কথা শুনে গাড়ির পিছনের সিটে বসে থাকা সুরেন্দার ও বলে উঠলো " চলিয়ে স্যার জানে ভি দিজিয়ে, কিউ আপনে কো পড়না হে ইয়ে সব মে "
আমি বললাম " পাগল কিসি কা মাদাদ করনে সে কুছ নহি বিগড়তা হে । "
বলার সাথে সাথেই আমি, ড্রাইভার, সাথে অগত্যা সুরেন্দার ও নেমে এগিয়ে এলাম রাস্তার ধারে এক কাত হয়ে পড়ে থাকা সাদা বলেরো গাড়িটার দিকে। প্রত্যেক টা কাঁচ ভাঙ্গা, রাস্তার উপর কাঁচের টুকরো গুলো শত শত হীরের মতো হয়ে পড়ে আছে , রাজস্থান এ সকাল হয় একটু দেরি তে তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। মোবাইলের ফ্ল্যাশ টা জ্বেলে এগোচ্ছিলাম কাঁচ গুলো সত্যিই যেনো হীরের মতো চকচক করতে লাগলো। গাড়ির ভিতরে ফ্ল্যাশ মারতেই আমরা তিন জনেই একসাথে অবাক হলাম কেউ নেই গাড়ির ভিতরে। যা অনুমান করে নেমেছিলাম তা ভুল ছিল আসলে এক্সিডেন্ট টা অনেক আগেই হয়তো ঘটেছিল আর ভিকটিম দের রেসকিউ করাও হয়তো হয়ে গিয়েছিল আমরা আমাদের গাড়ি তে ফিরতে যাবো , কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই রাস্তার ধারে চোখ যায় সুরেন্দার এর, ও কিছু বলার আগেই বমি করতে শুরু করে। ড্রাইভার দৌড়ে জল আনতে যায় আমাদের গাড়ি থেকে। তারপর তার বমি বন্ধ হয় জল দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে গাড়ি তে গিয়ে বসানো হয় তাকে। আমি আর ড্রাইভার দুজনে একবার কি মনে করে দেখতে যাই যে কি দেখে বমি করেছিল সে। গাড়ির যে পাশটায় সুরেন্দার দাড়িয়ে ছিল সেদিক টা যেতেই চমকে উঠলাম। দেখি ওইদিকের দুটো দরজার একটাও আস্ত নেই একটা গাড়ি থেকে আলাদা হয়ে রয়েছে তার সাথে একটা কাটা রক্তাত হাত সেই গাড়ির দরজার, নিচে চেপে রয়েছে আর সাথে ছড়িয়ে রয়েছে লাল রক্তত হীরে মানে ওই কাঁচের টুকরো গুলো।
ড্রাইভার আমাকে বলল, " স্যার চলিয়ে, ইয়া রেহনা সেহি নহি হোগা । "
অগত্যা আমিও সহমত হয়ে এগোতে গিয়ে কিছু একটা পায়ের নিচে শক্ত মতো চাপা দিয়ে ফেলি। ফ্ল্যাশ মেরে দেখতেই দেখি একটা সাদা রঙের Bluetooth AirBud, পাছে ড্রাইভার দেখে নেয়, আমি তাড়াতাড়ি করে ওটা পকেটে ভরে নিয়ে গাড়ি তে বসলাম। গাড়ি স্টার্ট দিতেই আবারও গান বেজে উঠলো, সুরেন্দার ততক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে। আমার মন পড়ে রইলো সেই EarBud টার উপর, যতক্ষণ না খুলে দেখছি জিনিসটা কেমন শান্তি নেই মনে আমার। আমরা আর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই হোটেল পৌঁছে গেলাম।

গাড়ি থেকে নেমেই হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে পকেটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বের করলাম EarBud টা, হাতে নিয়ে হোটেল এর আলো তেই দেখে খানিক টা অভক্তি লাগল , কারণ ওটায় রক্তের ছিটা লেগে শুকিয়ে গিয়েছিল। আমি রুমে গিয়ে ওটা জলে না ধুয়ে ওটায় বডিস্প্রে মেরে টিস্যু দিয়ে মুছে ফেললাম দুতিন বার। এবার বেশ লাগছে একটা স্ক্র্যাচ পড়লেও পুরো নতুন EarBud, SkullCandy এর logo টা দেখে আমার চোখ চক চক করে উঠলো। কানে দিয়ে মোবাইলের ব্লু টুথ কানেক্ট করে গান চালিয়ে ব্রাশ করতে চলে গেলাম। আহা মন টা গদো গদো হয়ে গেলো গান এর আওয়াজ কানে আসতেই । নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবান মনে হতে লাগলো আমার।
নাইট শিফট করায় এক রকম অভ্যেস হয়ে গেছে হোটেলে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাই না , ফিরে ব্রাশ করে , স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে একটু জেগেই থাকি, তারপর একেবারে সকাল সাতটায় ব্রেকফাস্ট করে তবে ঘুম দিই। আজ ও তাই করলাম স্নান সেরে মোবাইলে দেখি সাতটা বাজতে এখনো কুড়ি মিনিট বাকি আছে , আবারো Buds দুটো কানে লাগিয়ে গান শুনতে থাকি। কি মন গেলো ব্লুটুথ এ মডেল নাম দেখে google করলাম আর দাম টা দেখে আরো খুশি হয়ে গেলাম আমি। পুরোনো ব্লুটুথ Earphone টা একটু ডিস্টার্ব ই করছিল বটে। কখন গান শুনতে শুনতে চোখ লেগে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি টের পাইনি , চমকে উঠি একটা শব্দে। কানের কাছে কে যেন ভারী অথচ শুকনো গলায় বলে ওঠে অন্য ভাষায় কিছু একটা। উঠেই কান থেকে Earbuds দুটো খুলে ফেলি, দেখি সব normal সকালের আলো ফুটেছে, সময় দেখি আট টা বেজে গেছে , নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে চা টা খেতে খেতেই ফিরে আসি রুমে। তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করি, কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না, অগত্যা আবার Earbud কানে দিয়ে শার্লক হোমস এর গল্প শুনতে শুরু করি, The Adventure of the Engineer's Thumb , সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয় শার্লক যেনো স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের কোনো কাল্পনিক সৃষ্টি না সত্যি বর্তমান ছিলেন। এই সব ভাবতে ভাবতে কাহিনী শুনছি আর কখন আবার ঘুমিয়ে পড়েছি সে খেয়াল নেই, সারা রাত্রের ক্লান্তির ঘুমের অবশেষে অবসান ঘটলো আবার সেই অচেনা আওয়াজে কি বিভৎস ভয়ানক সেই আওয়াজ কান যেনো চিরে যায়। এবার বেশ কয়েকবার আওয়াজ টা repeat হয়েছিল।
কথা টা কিছুটা এরকম ছিল , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
আমি কেমন ঘাবড়ে যাই , প্রথমে তারপর মোবাইল চেক করে ভাবলাম online ads হতে পারে , স্ক্রিনে সময় দেখি , বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়েছিল স্নান করে লাঞ্চ সেরে আবার এসে কানে গুঁজে নিলাম earbud টা। 6000 টাকার জিনিস free তে পেয়েছি তার স্বাদ আলাদাই। অসম্পূর্ণ গল্প টা পুরোটা শুনতে লাগলাম , হাজার হোক বাঙালি তো দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর পিঠ বিছানা তে পড়লেই চোখ জুড়িয়ে ঘুম নেমে আসে। তবে এবার গল্প টা পুরোটা শুনে, তারপর soulful music চালিয়ে ঘুমিয়েছি।
হঠাৎ রুমের মধ্যে অন্ধকার টা একটু বেশি মনে হতে থাকে, জানালায় পর্দা ঢাকা ছিল তাই হয়তো। কান থেকে EarBud খুলতে গিয়ে ভিজে ভিজে অনুভূতি হয় কিছু, হাত দেখেই ভয়ে গা শিউরে ওঠে, দেখি হাতে চ্যাটচ্যাটে রক্ত । আমি চিৎকার করতে পারছিনা , কান থেকে খুলে EarBud দুটো ফেলে দি বিছানার নিচে দেখি বালিশের দুদিক ভিজে লাল স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে । কি করবো বুঝতে না পেরে জলের বোতল টা পাশের টেবিল থেকে নিতে যাই , তখন যা দেখি তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি কখনো। দেখি চোখের সামনে দাড়িয়ে এক ছায়ামূর্তি , যার একটা হাত নেই , একটা হাত আমার দিকে বাড়িয়ে , নিষ্প্রাণ চোখে যেনো চেয়ে আমার দিকে, সেই ছায়ামূর্তির চোখ আমি দেখতে পাইনি তবু মনে হচ্ছিল যেন লাল আভা দুটো কোটর থেকে ঠিকরে আসছে। আর সমানে সেই চেনা সুর বলে যাচ্ছে , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai..... Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."

আমার নিজের চিৎকারেই আমি জেগে উঠি , ঠাওর করতে পারি ভয়ানক স্বপ্ন ছিল পুরোটাই। খেয়াল হয় EarBud এর একটা কানে রয়েছে আর একটা বালিশের পাশে। কান থেকে খুলে নিয়ে বক্স এ ভরে দিলাম bud দুটো।

বিকেল তখনও রয়েছে , বলে রাখি এখানে সন্ধে হয় পুরোপুরি ভাবে রাত আটটায়। সময় তখন ছয় টা বেজে একুশ , কল লাগলাম ড্রাইভার কে , আজ একটু তাড়াতাড়ি আসতে বললাম, অন্যদিন ৮টা নাগাদ আসে যদিও। স্নান করে ready আমি , নিচে বসে চা খাচ্ছিলাম , আর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম , দেখি আমাদের food admin দাড়িয়ে রয়েছে। সে রাজস্থানি, নাম রমেশ সিং চৌহান। আমি ডাক দিলাম তাকে, চা খেতে বলে জিজ্ঞেস করলাম "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
এই কথার মানে কি ? যথারীতি সে বেশ মজা করেই বলল, ' আপনে কিসকা EarBud লে লিয়ে ' ।
আমি কথা টা ঘোরানোর জন্য সুরেন্দার এর নাম নিয়ে বললাম ওর EarBud আমার কাছে রয়ে গেছে তাই, ও বলছিল এটা।
মনে মনে বেশ ভয় পেতে লাগলাম, তবে কি সেই কাটা হাত , সেই রক্তের দাগ এসব ভাবতে ভাবতেই আমার ড্রাইভার, শ্বরবন এসে হাজির হাসি মুখে। ওর মুখ দেখলে কেনো জানিনা আমার বেশ হাসি হাসি পায়, সব ভুলে গাড়ি তে বসে গেলাম গান চলছে মাড়োয়ারি গান ।
আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো শ্বরবন , " স্যার আজ ইতনা জলদি কিউ বুলা লিয়া " ,

আমি বললাম , " আজ চলো ওহ মোবাইল শপ তুমহারা দোস্ত কা জিসকে পাস মে পিছলি বার স্ক্রীন গার্ড লাগায়া থা"
শ্বরবন বলল , " মোবাইল মে ক্যা হুয়া আপকা ? "
এবার অস্বস্তির সুরেই একটু রেগে বললাম , " চুপ চাপ চলো, অভি কোই সওয়াল জওয়াব নেহি "
দোকানে গিয়ে EarBud টা দেখলাম, আর মোবাইল এ google করে দেখলাম price টা , দোকানের ভাইয়া বুঝে গেলো ও বললো সোজা অর্ধেক দাম আমি বললাম না এর বদলে আমি নতুন earbud নিতে চাই। SkullCandy brand দেখে সেও সব চেক করে নিয়ে রাজি হয়ে গেলো, আমি ওই Earbud এর অর্ধেক দামের একটা নতুন BoAt এর EarBud কিনে নিয়ে গাড়ি তে বসে, অফিসে চলে গেলাম। সব স্বাভাবিক , পরের দিন ছিল রবিবার ভোরে হোটেলে ফিরেছি , মোবাইল ঘেঁটেছি , সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বেঘোরে ঘুমিয়ে গেছি।
কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানিনা ঘুম টা ভাঙলো একটা কল আসায়। কল টা তুলে মোবাইল কানে দিতেই, শ্বরবন কলের ওপার থেকে বলে উঠলো,
" স্যার আজ মে নেহি আউঙ্গা দুসরা ড্রাইভার আয়গা মেরি জগাহ , আপ admin সে বাত কর লো"

আমি বললাম , " কিউ তুমহে ক্যা হো গয়া "
উত্তরে যা বললো শ্বরবন আমার কান সেটা শুনতে প্রস্তুত ছিল না।
সে বলল , " আপনে কাল জিস দুকান সে নেয়া EarBud খরিদা উসকা death হো গয়া হে "
আমি কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলাম , " কাইসে হুয়া ইয়ে? "

শ্বরবন বলতে লাগলো, " উসকে কান সে বহত খুন নিকলা হে , উসকো কোই বিমারি থা শ্যায়াদ, ডক্টর নে চেক করকে বাতায়া কি, ব্রেইন হেমারেজ কা effect হে "
আমি কল টা রেখে , স্নান এ চলে গেলাম। দুপুরে কিচ্ছু খেতে ভালো লাগছিল না, দুমুঠো ভাত কোনো রকমে গিলে , রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
ঠিক করে ঘুমাতে পারছিলাম না, কেমন একটা অদ্ভুত চিন্তায় মন টা আনচান করতে লাগছিল। ভাবলাম একটু slow music শুনি, ঘুম এসে যাবে হয়তো।

এই ভেবেই বিছানার পাশের টেবিল থেকে নতুন EarBud টা হাতে নিয়ে box টা খুলতে গিয়ে যেই তাকাই দেখি সেই শুকনো কমলা রক্ত মাখা সেই সাদা SkullCandy - এর EarBud box টা আমারই হাতে................✍
কলমে - @Sherl0ck

তোমাদের কেমন লাগলো জানিও, অপেক্ষায় রইলাম তোমাদের মন্তব্যের, আগে আরো লিখবো।
@Anshhi @Bhoot @Anshh3 @Uronchondi @misstti @Ladywiththelamp @Ankita @Oishika @Meghnad @Oishi @Zer0 @Youknow @InkyWhispers @Doraemon @yoursumit07 @JISHU @ANNA007
Kichudin ratre ear pod gulo use korle ei golpo ta nischoy mone porbe
 
The EarBud

ফাঁকা হাইওয়ে গাড়ি ছুটছে ১০০-১২০কিমি/ঘণ্টা বেগে। অফিস থেকে ফিরছি ভোর তখন পাঁচটা হবে, ঘুমের ঝোঁক লেগে দুলছি গান বাজছে গাড়ি তে, আচমকা ব্রেক কষায় শরীর টা এগিয়ে এলো এমন ভাবে মনে হলো দেহ থেকে আত্মা পলায়ন হবে।
ড্রাইভার ছিল রাজস্থানি, ধমক দিয়ে উঠলাম " পাগল হে ক্যা?? ইতনা জোর সে আচানক ব্রেক কিউ মারা??? "
ড্রাইভার বলল, " সাব আগে এক্সিডেন্ট হুয়া হে সায়াদ ইসলিয়ে রোক দিয়া "
ওর কথা শুনে গাড়ির পিছনের সিটে বসে থাকা সুরেন্দার ও বলে উঠলো " চলিয়ে স্যার জানে ভি দিজিয়ে, কিউ আপনে কো পড়না হে ইয়ে সব মে "
আমি বললাম " পাগল কিসি কা মাদাদ করনে সে কুছ নহি বিগড়তা হে । "
বলার সাথে সাথেই আমি, ড্রাইভার, সাথে অগত্যা সুরেন্দার ও নেমে এগিয়ে এলাম রাস্তার ধারে এক কাত হয়ে পড়ে থাকা সাদা বলেরো গাড়িটার দিকে। প্রত্যেক টা কাঁচ ভাঙ্গা, রাস্তার উপর কাঁচের টুকরো গুলো শত শত হীরের মতো হয়ে পড়ে আছে , রাজস্থান এ সকাল হয় একটু দেরি তে তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। মোবাইলের ফ্ল্যাশ টা জ্বেলে এগোচ্ছিলাম কাঁচ গুলো সত্যিই যেনো হীরের মতো চকচক করতে লাগলো। গাড়ির ভিতরে ফ্ল্যাশ মারতেই আমরা তিন জনেই একসাথে অবাক হলাম কেউ নেই গাড়ির ভিতরে। যা অনুমান করে নেমেছিলাম তা ভুল ছিল আসলে এক্সিডেন্ট টা অনেক আগেই হয়তো ঘটেছিল আর ভিকটিম দের রেসকিউ করাও হয়তো হয়ে গিয়েছিল আমরা আমাদের গাড়ি তে ফিরতে যাবো , কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই রাস্তার ধারে চোখ যায় সুরেন্দার এর, ও কিছু বলার আগেই বমি করতে শুরু করে। ড্রাইভার দৌড়ে জল আনতে যায় আমাদের গাড়ি থেকে। তারপর তার বমি বন্ধ হয় জল দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে গাড়ি তে গিয়ে বসানো হয় তাকে। আমি আর ড্রাইভার দুজনে একবার কি মনে করে দেখতে যাই যে কি দেখে বমি করেছিল সে। গাড়ির যে পাশটায় সুরেন্দার দাড়িয়ে ছিল সেদিক টা যেতেই চমকে উঠলাম। দেখি ওইদিকের দুটো দরজার একটাও আস্ত নেই একটা গাড়ি থেকে আলাদা হয়ে রয়েছে তার সাথে একটা কাটা রক্তাত হাত সেই গাড়ির দরজার, নিচে চেপে রয়েছে আর সাথে ছড়িয়ে রয়েছে লাল রক্তত হীরে মানে ওই কাঁচের টুকরো গুলো।
ড্রাইভার আমাকে বলল, " স্যার চলিয়ে, ইয়া রেহনা সেহি নহি হোগা । "
অগত্যা আমিও সহমত হয়ে এগোতে গিয়ে কিছু একটা পায়ের নিচে শক্ত মতো চাপা দিয়ে ফেলি। ফ্ল্যাশ মেরে দেখতেই দেখি একটা সাদা রঙের Bluetooth AirBud, পাছে ড্রাইভার দেখে নেয়, আমি তাড়াতাড়ি করে ওটা পকেটে ভরে নিয়ে গাড়ি তে বসলাম। গাড়ি স্টার্ট দিতেই আবারও গান বেজে উঠলো, সুরেন্দার ততক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে। আমার মন পড়ে রইলো সেই EarBud টার উপর, যতক্ষণ না খুলে দেখছি জিনিসটা কেমন শান্তি নেই মনে আমার। আমরা আর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই হোটেল পৌঁছে গেলাম।

গাড়ি থেকে নেমেই হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে পকেটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বের করলাম EarBud টা, হাতে নিয়ে হোটেল এর আলো তেই দেখে খানিক টা অভক্তি লাগল , কারণ ওটায় রক্তের ছিটা লেগে শুকিয়ে গিয়েছিল। আমি রুমে গিয়ে ওটা জলে না ধুয়ে ওটায় বডিস্প্রে মেরে টিস্যু দিয়ে মুছে ফেললাম দুতিন বার। এবার বেশ লাগছে একটা স্ক্র্যাচ পড়লেও পুরো নতুন EarBud, SkullCandy এর logo টা দেখে আমার চোখ চক চক করে উঠলো। কানে দিয়ে মোবাইলের ব্লু টুথ কানেক্ট করে গান চালিয়ে ব্রাশ করতে চলে গেলাম। আহা মন টা গদো গদো হয়ে গেলো গান এর আওয়াজ কানে আসতেই । নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবান মনে হতে লাগলো আমার।
নাইট শিফট করায় এক রকম অভ্যেস হয়ে গেছে হোটেলে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাই না , ফিরে ব্রাশ করে , স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে একটু জেগেই থাকি, তারপর একেবারে সকাল সাতটায় ব্রেকফাস্ট করে তবে ঘুম দিই। আজ ও তাই করলাম স্নান সেরে মোবাইলে দেখি সাতটা বাজতে এখনো কুড়ি মিনিট বাকি আছে , আবারো Buds দুটো কানে লাগিয়ে গান শুনতে থাকি। কি মন গেলো ব্লুটুথ এ মডেল নাম দেখে google করলাম আর দাম টা দেখে আরো খুশি হয়ে গেলাম আমি। পুরোনো ব্লুটুথ Earphone টা একটু ডিস্টার্ব ই করছিল বটে। কখন গান শুনতে শুনতে চোখ লেগে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি টের পাইনি , চমকে উঠি একটা শব্দে। কানের কাছে কে যেন ভারী অথচ শুকনো গলায় বলে ওঠে অন্য ভাষায় কিছু একটা। উঠেই কান থেকে Earbuds দুটো খুলে ফেলি, দেখি সব normal সকালের আলো ফুটেছে, সময় দেখি আট টা বেজে গেছে , নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে চা টা খেতে খেতেই ফিরে আসি রুমে। তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করি, কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না, অগত্যা আবার Earbud কানে দিয়ে শার্লক হোমস এর গল্প শুনতে শুরু করি, The Adventure of the Engineer's Thumb , সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয় শার্লক যেনো স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের কোনো কাল্পনিক সৃষ্টি না সত্যি বর্তমান ছিলেন। এই সব ভাবতে ভাবতে কাহিনী শুনছি আর কখন আবার ঘুমিয়ে পড়েছি সে খেয়াল নেই, সারা রাত্রের ক্লান্তির ঘুমের অবশেষে অবসান ঘটলো আবার সেই অচেনা আওয়াজে কি বিভৎস ভয়ানক সেই আওয়াজ কান যেনো চিরে যায়। এবার বেশ কয়েকবার আওয়াজ টা repeat হয়েছিল।
কথা টা কিছুটা এরকম ছিল , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
আমি কেমন ঘাবড়ে যাই , প্রথমে তারপর মোবাইল চেক করে ভাবলাম online ads হতে পারে , স্ক্রিনে সময় দেখি , বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়েছিল স্নান করে লাঞ্চ সেরে আবার এসে কানে গুঁজে নিলাম earbud টা। 6000 টাকার জিনিস free তে পেয়েছি তার স্বাদ আলাদাই। অসম্পূর্ণ গল্প টা পুরোটা শুনতে লাগলাম , হাজার হোক বাঙালি তো দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর পিঠ বিছানা তে পড়লেই চোখ জুড়িয়ে ঘুম নেমে আসে। তবে এবার গল্প টা পুরোটা শুনে, তারপর soulful music চালিয়ে ঘুমিয়েছি।
হঠাৎ রুমের মধ্যে অন্ধকার টা একটু বেশি মনে হতে থাকে, জানালায় পর্দা ঢাকা ছিল তাই হয়তো। কান থেকে EarBud খুলতে গিয়ে ভিজে ভিজে অনুভূতি হয় কিছু, হাত দেখেই ভয়ে গা শিউরে ওঠে, দেখি হাতে চ্যাটচ্যাটে রক্ত । আমি চিৎকার করতে পারছিনা , কান থেকে খুলে EarBud দুটো ফেলে দি বিছানার নিচে দেখি বালিশের দুদিক ভিজে লাল স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে । কি করবো বুঝতে না পেরে জলের বোতল টা পাশের টেবিল থেকে নিতে যাই , তখন যা দেখি তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি কখনো। দেখি চোখের সামনে দাড়িয়ে এক ছায়ামূর্তি , যার একটা হাত নেই , একটা হাত আমার দিকে বাড়িয়ে , নিষ্প্রাণ চোখে যেনো চেয়ে আমার দিকে, সেই ছায়ামূর্তির চোখ আমি দেখতে পাইনি তবু মনে হচ্ছিল যেন লাল আভা দুটো কোটর থেকে ঠিকরে আসছে। আর সমানে সেই চেনা সুর বলে যাচ্ছে , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai..... Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."

আমার নিজের চিৎকারেই আমি জেগে উঠি , ঠাওর করতে পারি ভয়ানক স্বপ্ন ছিল পুরোটাই। খেয়াল হয় EarBud এর একটা কানে রয়েছে আর একটা বালিশের পাশে। কান থেকে খুলে নিয়ে বক্স এ ভরে দিলাম bud দুটো।

বিকেল তখনও রয়েছে , বলে রাখি এখানে সন্ধে হয় পুরোপুরি ভাবে রাত আটটায়। সময় তখন ছয় টা বেজে একুশ , কল লাগলাম ড্রাইভার কে , আজ একটু তাড়াতাড়ি আসতে বললাম, অন্যদিন ৮টা নাগাদ আসে যদিও। স্নান করে ready আমি , নিচে বসে চা খাচ্ছিলাম , আর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম , দেখি আমাদের food admin দাড়িয়ে রয়েছে। সে রাজস্থানি, নাম রমেশ সিং চৌহান। আমি ডাক দিলাম তাকে, চা খেতে বলে জিজ্ঞেস করলাম "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
এই কথার মানে কি ? যথারীতি সে বেশ মজা করেই বলল, ' আপনে কিসকা EarBud লে লিয়ে ' ।
আমি কথা টা ঘোরানোর জন্য সুরেন্দার এর নাম নিয়ে বললাম ওর EarBud আমার কাছে রয়ে গেছে তাই, ও বলছিল এটা।
মনে মনে বেশ ভয় পেতে লাগলাম, তবে কি সেই কাটা হাত , সেই রক্তের দাগ এসব ভাবতে ভাবতেই আমার ড্রাইভার, শ্বরবন এসে হাজির হাসি মুখে। ওর মুখ দেখলে কেনো জানিনা আমার বেশ হাসি হাসি পায়, সব ভুলে গাড়ি তে বসে গেলাম গান চলছে মাড়োয়ারি গান ।
আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো শ্বরবন , " স্যার আজ ইতনা জলদি কিউ বুলা লিয়া " ,

আমি বললাম , " আজ চলো ওহ মোবাইল শপ তুমহারা দোস্ত কা জিসকে পাস মে পিছলি বার স্ক্রীন গার্ড লাগায়া থা"
শ্বরবন বলল , " মোবাইল মে ক্যা হুয়া আপকা ? "
এবার অস্বস্তির সুরেই একটু রেগে বললাম , " চুপ চাপ চলো, অভি কোই সওয়াল জওয়াব নেহি "
দোকানে গিয়ে EarBud টা দেখলাম, আর মোবাইল এ google করে দেখলাম price টা , দোকানের ভাইয়া বুঝে গেলো ও বললো সোজা অর্ধেক দাম আমি বললাম না এর বদলে আমি নতুন earbud নিতে চাই। SkullCandy brand দেখে সেও সব চেক করে নিয়ে রাজি হয়ে গেলো, আমি ওই Earbud এর অর্ধেক দামের একটা নতুন BoAt এর EarBud কিনে নিয়ে গাড়ি তে বসে, অফিসে চলে গেলাম। সব স্বাভাবিক , পরের দিন ছিল রবিবার ভোরে হোটেলে ফিরেছি , মোবাইল ঘেঁটেছি , সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বেঘোরে ঘুমিয়ে গেছি।
কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানিনা ঘুম টা ভাঙলো একটা কল আসায়। কল টা তুলে মোবাইল কানে দিতেই, শ্বরবন কলের ওপার থেকে বলে উঠলো,
" স্যার আজ মে নেহি আউঙ্গা দুসরা ড্রাইভার আয়গা মেরি জগাহ , আপ admin সে বাত কর লো"

আমি বললাম , " কিউ তুমহে ক্যা হো গয়া "
উত্তরে যা বললো শ্বরবন আমার কান সেটা শুনতে প্রস্তুত ছিল না।
সে বলল , " আপনে কাল জিস দুকান সে নেয়া EarBud খরিদা উসকা death হো গয়া হে "
আমি কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলাম , " কাইসে হুয়া ইয়ে? "

শ্বরবন বলতে লাগলো, " উসকে কান সে বহত খুন নিকলা হে , উসকো কোই বিমারি থা শ্যায়াদ, ডক্টর নে চেক করকে বাতায়া কি, ব্রেইন হেমারেজ কা effect হে "
আমি কল টা রেখে , স্নান এ চলে গেলাম। দুপুরে কিচ্ছু খেতে ভালো লাগছিল না, দুমুঠো ভাত কোনো রকমে গিলে , রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
ঠিক করে ঘুমাতে পারছিলাম না, কেমন একটা অদ্ভুত চিন্তায় মন টা আনচান করতে লাগছিল। ভাবলাম একটু slow music শুনি, ঘুম এসে যাবে হয়তো।

এই ভেবেই বিছানার পাশের টেবিল থেকে নতুন EarBud টা হাতে নিয়ে box টা খুলতে গিয়ে যেই তাকাই দেখি সেই শুকনো কমলা রক্ত মাখা সেই সাদা SkullCandy - এর EarBud box টা আমারই হাতে................✍
কলমে - @Sherl0ck

তোমাদের কেমন লাগলো জানিও, অপেক্ষায় রইলাম তোমাদের মন্তব্যের, আগে আরো লিখবো।
@Anshhi @Bhoot @Anshh3 @Uronchondi @misstti @Ladywiththelamp @Ankita @Oishika @Meghnad @Oishi @Zer0 @Youknow @InkyWhispers @Doraemon @yoursumit07 @JISHU @ANNA007
Naaa durei rakhi ear pod duti, aaj na rakhai sreyooo mathar kache, i am little vi to, to be honest.
 
The EarBud

ফাঁকা হাইওয়ে গাড়ি ছুটছে ১০০-১২০কিমি/ঘণ্টা বেগে। অফিস থেকে ফিরছি ভোর তখন পাঁচটা হবে, ঘুমের ঝোঁক লেগে দুলছি গান বাজছে গাড়ি তে, আচমকা ব্রেক কষায় শরীর টা এগিয়ে এলো এমন ভাবে মনে হলো দেহ থেকে আত্মা পলায়ন হবে।
ড্রাইভার ছিল রাজস্থানি, ধমক দিয়ে উঠলাম " পাগল হে ক্যা?? ইতনা জোর সে আচানক ব্রেক কিউ মারা??? "
ড্রাইভার বলল, " সাব আগে এক্সিডেন্ট হুয়া হে সায়াদ ইসলিয়ে রোক দিয়া "
ওর কথা শুনে গাড়ির পিছনের সিটে বসে থাকা সুরেন্দার ও বলে উঠলো " চলিয়ে স্যার জানে ভি দিজিয়ে, কিউ আপনে কো পড়না হে ইয়ে সব মে "
আমি বললাম " পাগল কিসি কা মাদাদ করনে সে কুছ নহি বিগড়তা হে । "
বলার সাথে সাথেই আমি, ড্রাইভার, সাথে অগত্যা সুরেন্দার ও নেমে এগিয়ে এলাম রাস্তার ধারে এক কাত হয়ে পড়ে থাকা সাদা বলেরো গাড়িটার দিকে। প্রত্যেক টা কাঁচ ভাঙ্গা, রাস্তার উপর কাঁচের টুকরো গুলো শত শত হীরের মতো হয়ে পড়ে আছে , রাজস্থান এ সকাল হয় একটু দেরি তে তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। মোবাইলের ফ্ল্যাশ টা জ্বেলে এগোচ্ছিলাম কাঁচ গুলো সত্যিই যেনো হীরের মতো চকচক করতে লাগলো। গাড়ির ভিতরে ফ্ল্যাশ মারতেই আমরা তিন জনেই একসাথে অবাক হলাম কেউ নেই গাড়ির ভিতরে। যা অনুমান করে নেমেছিলাম তা ভুল ছিল আসলে এক্সিডেন্ট টা অনেক আগেই হয়তো ঘটেছিল আর ভিকটিম দের রেসকিউ করাও হয়তো হয়ে গিয়েছিল আমরা আমাদের গাড়ি তে ফিরতে যাবো , কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই রাস্তার ধারে চোখ যায় সুরেন্দার এর, ও কিছু বলার আগেই বমি করতে শুরু করে। ড্রাইভার দৌড়ে জল আনতে যায় আমাদের গাড়ি থেকে। তারপর তার বমি বন্ধ হয় জল দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে গাড়ি তে গিয়ে বসানো হয় তাকে। আমি আর ড্রাইভার দুজনে একবার কি মনে করে দেখতে যাই যে কি দেখে বমি করেছিল সে। গাড়ির যে পাশটায় সুরেন্দার দাড়িয়ে ছিল সেদিক টা যেতেই চমকে উঠলাম। দেখি ওইদিকের দুটো দরজার একটাও আস্ত নেই একটা গাড়ি থেকে আলাদা হয়ে রয়েছে তার সাথে একটা কাটা রক্তাত হাত সেই গাড়ির দরজার, নিচে চেপে রয়েছে আর সাথে ছড়িয়ে রয়েছে লাল রক্তত হীরে মানে ওই কাঁচের টুকরো গুলো।
ড্রাইভার আমাকে বলল, " স্যার চলিয়ে, ইয়া রেহনা সেহি নহি হোগা । "
অগত্যা আমিও সহমত হয়ে এগোতে গিয়ে কিছু একটা পায়ের নিচে শক্ত মতো চাপা দিয়ে ফেলি। ফ্ল্যাশ মেরে দেখতেই দেখি একটা সাদা রঙের Bluetooth AirBud, পাছে ড্রাইভার দেখে নেয়, আমি তাড়াতাড়ি করে ওটা পকেটে ভরে নিয়ে গাড়ি তে বসলাম। গাড়ি স্টার্ট দিতেই আবারও গান বেজে উঠলো, সুরেন্দার ততক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে। আমার মন পড়ে রইলো সেই EarBud টার উপর, যতক্ষণ না খুলে দেখছি জিনিসটা কেমন শান্তি নেই মনে আমার। আমরা আর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই হোটেল পৌঁছে গেলাম।

গাড়ি থেকে নেমেই হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে পকেটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বের করলাম EarBud টা, হাতে নিয়ে হোটেল এর আলো তেই দেখে খানিক টা অভক্তি লাগল , কারণ ওটায় রক্তের ছিটা লেগে শুকিয়ে গিয়েছিল। আমি রুমে গিয়ে ওটা জলে না ধুয়ে ওটায় বডিস্প্রে মেরে টিস্যু দিয়ে মুছে ফেললাম দুতিন বার। এবার বেশ লাগছে একটা স্ক্র্যাচ পড়লেও পুরো নতুন EarBud, SkullCandy এর logo টা দেখে আমার চোখ চক চক করে উঠলো। কানে দিয়ে মোবাইলের ব্লু টুথ কানেক্ট করে গান চালিয়ে ব্রাশ করতে চলে গেলাম। আহা মন টা গদো গদো হয়ে গেলো গান এর আওয়াজ কানে আসতেই । নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবান মনে হতে লাগলো আমার।
নাইট শিফট করায় এক রকম অভ্যেস হয়ে গেছে হোটেলে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাই না , ফিরে ব্রাশ করে , স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে একটু জেগেই থাকি, তারপর একেবারে সকাল সাতটায় ব্রেকফাস্ট করে তবে ঘুম দিই। আজ ও তাই করলাম স্নান সেরে মোবাইলে দেখি সাতটা বাজতে এখনো কুড়ি মিনিট বাকি আছে , আবারো Buds দুটো কানে লাগিয়ে গান শুনতে থাকি। কি মন গেলো ব্লুটুথ এ মডেল নাম দেখে google করলাম আর দাম টা দেখে আরো খুশি হয়ে গেলাম আমি। পুরোনো ব্লুটুথ Earphone টা একটু ডিস্টার্ব ই করছিল বটে। কখন গান শুনতে শুনতে চোখ লেগে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি টের পাইনি , চমকে উঠি একটা শব্দে। কানের কাছে কে যেন ভারী অথচ শুকনো গলায় বলে ওঠে অন্য ভাষায় কিছু একটা। উঠেই কান থেকে Earbuds দুটো খুলে ফেলি, দেখি সব normal সকালের আলো ফুটেছে, সময় দেখি আট টা বেজে গেছে , নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে চা টা খেতে খেতেই ফিরে আসি রুমে। তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করি, কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না, অগত্যা আবার Earbud কানে দিয়ে শার্লক হোমস এর গল্প শুনতে শুরু করি, The Adventure of the Engineer's Thumb , সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয় শার্লক যেনো স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের কোনো কাল্পনিক সৃষ্টি না সত্যি বর্তমান ছিলেন। এই সব ভাবতে ভাবতে কাহিনী শুনছি আর কখন আবার ঘুমিয়ে পড়েছি সে খেয়াল নেই, সারা রাত্রের ক্লান্তির ঘুমের অবশেষে অবসান ঘটলো আবার সেই অচেনা আওয়াজে কি বিভৎস ভয়ানক সেই আওয়াজ কান যেনো চিরে যায়। এবার বেশ কয়েকবার আওয়াজ টা repeat হয়েছিল।
কথা টা কিছুটা এরকম ছিল , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
আমি কেমন ঘাবড়ে যাই , প্রথমে তারপর মোবাইল চেক করে ভাবলাম online ads হতে পারে , স্ক্রিনে সময় দেখি , বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়েছিল স্নান করে লাঞ্চ সেরে আবার এসে কানে গুঁজে নিলাম earbud টা। 6000 টাকার জিনিস free তে পেয়েছি তার স্বাদ আলাদাই। অসম্পূর্ণ গল্প টা পুরোটা শুনতে লাগলাম , হাজার হোক বাঙালি তো দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর পিঠ বিছানা তে পড়লেই চোখ জুড়িয়ে ঘুম নেমে আসে। তবে এবার গল্প টা পুরোটা শুনে, তারপর soulful music চালিয়ে ঘুমিয়েছি।
হঠাৎ রুমের মধ্যে অন্ধকার টা একটু বেশি মনে হতে থাকে, জানালায় পর্দা ঢাকা ছিল তাই হয়তো। কান থেকে EarBud খুলতে গিয়ে ভিজে ভিজে অনুভূতি হয় কিছু, হাত দেখেই ভয়ে গা শিউরে ওঠে, দেখি হাতে চ্যাটচ্যাটে রক্ত । আমি চিৎকার করতে পারছিনা , কান থেকে খুলে EarBud দুটো ফেলে দি বিছানার নিচে দেখি বালিশের দুদিক ভিজে লাল স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে । কি করবো বুঝতে না পেরে জলের বোতল টা পাশের টেবিল থেকে নিতে যাই , তখন যা দেখি তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি কখনো। দেখি চোখের সামনে দাড়িয়ে এক ছায়ামূর্তি , যার একটা হাত নেই , একটা হাত আমার দিকে বাড়িয়ে , নিষ্প্রাণ চোখে যেনো চেয়ে আমার দিকে, সেই ছায়ামূর্তির চোখ আমি দেখতে পাইনি তবু মনে হচ্ছিল যেন লাল আভা দুটো কোটর থেকে ঠিকরে আসছে। আর সমানে সেই চেনা সুর বলে যাচ্ছে , "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai..... Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."

আমার নিজের চিৎকারেই আমি জেগে উঠি , ঠাওর করতে পারি ভয়ানক স্বপ্ন ছিল পুরোটাই। খেয়াল হয় EarBud এর একটা কানে রয়েছে আর একটা বালিশের পাশে। কান থেকে খুলে নিয়ে বক্স এ ভরে দিলাম bud দুটো।

বিকেল তখনও রয়েছে , বলে রাখি এখানে সন্ধে হয় পুরোপুরি ভাবে রাত আটটায়। সময় তখন ছয় টা বেজে একুশ , কল লাগলাম ড্রাইভার কে , আজ একটু তাড়াতাড়ি আসতে বললাম, অন্যদিন ৮টা নাগাদ আসে যদিও। স্নান করে ready আমি , নিচে বসে চা খাচ্ছিলাম , আর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম , দেখি আমাদের food admin দাড়িয়ে রয়েছে। সে রাজস্থানি, নাম রমেশ সিং চৌহান। আমি ডাক দিলাম তাকে, চা খেতে বলে জিজ্ঞেস করলাম "Mhari cheez mhane wapas de, woh mharo shauk ro earbud hai."
এই কথার মানে কি ? যথারীতি সে বেশ মজা করেই বলল, ' আপনে কিসকা EarBud লে লিয়ে ' ।
আমি কথা টা ঘোরানোর জন্য সুরেন্দার এর নাম নিয়ে বললাম ওর EarBud আমার কাছে রয়ে গেছে তাই, ও বলছিল এটা।
মনে মনে বেশ ভয় পেতে লাগলাম, তবে কি সেই কাটা হাত , সেই রক্তের দাগ এসব ভাবতে ভাবতেই আমার ড্রাইভার, শ্বরবন এসে হাজির হাসি মুখে। ওর মুখ দেখলে কেনো জানিনা আমার বেশ হাসি হাসি পায়, সব ভুলে গাড়ি তে বসে গেলাম গান চলছে মাড়োয়ারি গান ।
আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো শ্বরবন , " স্যার আজ ইতনা জলদি কিউ বুলা লিয়া " ,

আমি বললাম , " আজ চলো ওহ মোবাইল শপ তুমহারা দোস্ত কা জিসকে পাস মে পিছলি বার স্ক্রীন গার্ড লাগায়া থা"
শ্বরবন বলল , " মোবাইল মে ক্যা হুয়া আপকা ? "
এবার অস্বস্তির সুরেই একটু রেগে বললাম , " চুপ চাপ চলো, অভি কোই সওয়াল জওয়াব নেহি "
দোকানে গিয়ে EarBud টা দেখলাম, আর মোবাইল এ google করে দেখলাম price টা , দোকানের ভাইয়া বুঝে গেলো ও বললো সোজা অর্ধেক দাম আমি বললাম না এর বদলে আমি নতুন earbud নিতে চাই। SkullCandy brand দেখে সেও সব চেক করে নিয়ে রাজি হয়ে গেলো, আমি ওই Earbud এর অর্ধেক দামের একটা নতুন BoAt এর EarBud কিনে নিয়ে গাড়ি তে বসে, অফিসে চলে গেলাম। সব স্বাভাবিক , পরের দিন ছিল রবিবার ভোরে হোটেলে ফিরেছি , মোবাইল ঘেঁটেছি , সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বেঘোরে ঘুমিয়ে গেছি।
কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানিনা ঘুম টা ভাঙলো একটা কল আসায়। কল টা তুলে মোবাইল কানে দিতেই, শ্বরবন কলের ওপার থেকে বলে উঠলো,
" স্যার আজ মে নেহি আউঙ্গা দুসরা ড্রাইভার আয়গা মেরি জগাহ , আপ admin সে বাত কর লো"

আমি বললাম , " কিউ তুমহে ক্যা হো গয়া "
উত্তরে যা বললো শ্বরবন আমার কান সেটা শুনতে প্রস্তুত ছিল না।
সে বলল , " আপনে কাল জিস দুকান সে নেয়া EarBud খরিদা উসকা death হো গয়া হে "
আমি কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলাম , " কাইসে হুয়া ইয়ে? "

শ্বরবন বলতে লাগলো, " উসকে কান সে বহত খুন নিকলা হে , উসকো কোই বিমারি থা শ্যায়াদ, ডক্টর নে চেক করকে বাতায়া কি, ব্রেইন হেমারেজ কা effect হে "
আমি কল টা রেখে , স্নান এ চলে গেলাম। দুপুরে কিচ্ছু খেতে ভালো লাগছিল না, দুমুঠো ভাত কোনো রকমে গিলে , রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
ঠিক করে ঘুমাতে পারছিলাম না, কেমন একটা অদ্ভুত চিন্তায় মন টা আনচান করতে লাগছিল। ভাবলাম একটু slow music শুনি, ঘুম এসে যাবে হয়তো।

এই ভেবেই বিছানার পাশের টেবিল থেকে নতুন EarBud টা হাতে নিয়ে box টা খুলতে গিয়ে যেই তাকাই দেখি সেই শুকনো কমলা রক্ত মাখা সেই সাদা SkullCandy - এর EarBud box টা আমারই হাতে................✍
কলমে - @Sherl0ck

তোমাদের কেমন লাগলো জানিও, অপেক্ষায় রইলাম তোমাদের মন্তব্যের, আগে আরো লিখবো।
@Anshhi @Bhoot @Anshh3 @Uronchondi @misstti @Ladywiththelamp @Ankita @Oishika @Meghnad @Oishi @Zer0 @Youknow @InkyWhispers @Doraemon @yoursumit07 @JISHU @ANNA007
Oppekhaai roilam erokom aaro lekha porar jonno.
 
@Sherlock
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা, আর ক্লাইম্যাক্সটা শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিল।ভয়ঙ্কর সুন্দর একটা গল্প! EarBud-এর এইরকম পরিণতি ভাবিনি।

Awesome Intelligence
 
@Sherlock
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা, আর ক্লাইম্যাক্সটা শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিল।ভয়ঙ্কর সুন্দর একটা গল্প! EarBud-এর এইরকম পরিণতি ভাবিনি।

Awesome Intelligence
তোমার অনুপ্রেরণাতেই আবার লেখার সাহস পাই ♥️
 
খুব সাবলীল এবং অনবদ্য লেখা, এতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া গুলো ও খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিস, এগিয়ে যা। ❤️
 
খুব সাবলীল এবং অনবদ্য লেখা, এতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া গুলো ও খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিস, এগিয়ে যা। ❤️
অনেক অনেক ভালোবাসা, তোদের জন্যই লেখার সাহস পাই বড়ভাই ❤️
 
Sera likhechhis kono kotha hobe na ,... Emon। e likhe jaa next part er opekkha roilo .... ♥️
Next part আনতে গেলে আমাকে মরতে হবে, ভেবে দেখবো, তোরা আছিস তো help করার জন্য ❤️
 
Top