পর্ব ১
জানালা দিয়ে ফুরফুরে বাতাস ঘামে ভেজা শরীরটাকে বেশ শীতল করে দিচ্ছিল। বাইরে নিশীথের কাজল কালো যবনিকা আর তারারা আকাশে চকমকি সামিয়ানা খাটিয়ে রাত্রির আসর বসিয়েছে। খানাখন্দ ভরা রাস্তা দিয়ে আমাদের টাটা সুমোটা বিকট হর্ন দিতে-দিতে সেই আসরের তাল ভঙ্গ করে এগিয়ে চলছে। দু'পাশে দীর্ঘায়ত বৃক্ষরাশি, আর মাঝখানে সরু পিচ রাস্তা দিয়ে চলছি।
"ইন্দ্রদা আমার তো বেশ ভয়-ভয় লাগছে!"
"মাধ্যমিক পাশ করে গেছিস সৌম্য, এখনও তোর ভয় ভাবটা কাটল না? চোর-ডাকাত ছাড়া এই জঙ্গলের রাস্তায় কেউ attack করবে বলে কী তোর মনে হয়?"
এই প্রসঙ্গে বলে রাখি আমরা, মানে আমি আর ইন্দ্রজিৎ সান্যাল একটা murder case এর investigation করে শ্যামবাজার ফিরছি। এখন আমরা কোলকাতা ছেড়ে অনেকটা দূরে একটা জঙ্গলের পথে। এমন সময় আমাদের গাড়িটা হঠাৎ জোরে ব্রেক কষে থেমে গেল আর পাশের লাল মাটির ধুলো হেড লাইটের আলোয় পাক খেতে-খেতে শূন্যে মিলিয়ে গেল।
"কী হল ইন্দ্রদা?"
"সেটাই তো, দাঁড়া নেমে দেখি।"
ইন্দ্রদা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। আমি বসে রইলাম। জানালা দিয়ে মৃত্যু, বিভীষিকাময় হিংস্র অরণ্য ভাঙ্গা-ভাঙ্গা জ্যোৎস্নায় দাঁত বের করে হাসছে। চারদিক প্রেতপুরীর মত নিস্তব্ধ শীতল। ইন্দ্রদার পদচালনায় মাটিতে বিছানো পত্রের মর্মরধ্বনি কান্নার শব্দের মত শোনাচ্ছে।
বাইরে ইন্দ্রদার গলা শোনা গেল, "গাড়ির টায়ার গেছে, হোপলেস!"
আমি দরজা খুলে টর্চটা নিয়ে বাইরে এলাম। চকিতের জন্য অদূরে একটা ময়ূর ডেকে উঠল।
"এখন তাহলে কী হবে ইন্দ্রদা?"
"আপাতত রাতটা জঙ্গলেই কাটাতে হবে বলে মনে হয়। কারণ, কাছাকাছি কোনও দোকানও তো নেই। কিন্তু strange! চাকাটা brust হল কী করে? টর্চটা দে তো সৌম্য।"
ইন্দ্রদা টর্চ নিয়ে হাটতে লাগল। রোমাঞ্চিত স্তব্ধ প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলাম। কানের কাছে কিছু বুনো মৌমাছির গুনগুনানি আর নাকে কিছু একটা ফুলের গন্ধ পাচ্ছিলাম ... হয়তো ওই সাদা ফুলটার, যেটা অন্ধকারের বুক চিরে অদূরে ফুটে রয়েছে। খুব দূরে হাল্কা আলো টিমটিম করছে ... বোধ হয় জঙ্গল থেকে অনেক দূরে গ্রাম রয়েছে। কিছু দূরেই আধ-ফালি চাঁদের আলোয় চকচক করছে একটা ডাকবাংলো। কিন্তু ওটা কী? তমসাবৃত বনানীর ফাঁকে উঁকি মারছে দুটো নীলাভ চোখ ... ক্রমশ আবছা থেকে স্পষ্ট ... তার মানে এগিয়ে আসছে। আমিও সচেতন হয়ে অনেকটা পিছনে চলে এসেছি। সারা শরীরে তখন আমার আগুনের হল্কা বইছে ... হঠাৎ একটা শীতল হাত আমার কাঁধে ... পিছন ফিরে দেখি ইন্দ্রদা। ও ইশারায় আমাকে চুপ থাকতে বলল। আমরা ধীরে একটি শাল গাছের আড়ালে আত্মগোপন করলাম। দেখলাম, একটি কালো রোমশ ভাল্লুক এগিয়ে আসছে ... চোখ দুটিতে নীলচে ঝিলিক। আমাদের টাটা সুমোর কাছে এসে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করার পর পিছন দিক দিয়ে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। ক্ষণিকের জন্য খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম ভয়ে। অবশ্য ভালুকে আমার খুব একটা ভয় নেই তার প্রমাণ সেবার আমরা, মামা-ভাগ্নে পাহাড়ে দিয়েছি। ইন্দ্রদার ভালুকের পোশাক পড়ে অভিনয়টা সেদিন পাহাড়ের পুরো ডাকাত দলটাকে বোকা বানিয়ে ছেড়েছিল। কিন্তু আজ কেন জানি না, এই ছায়াময় ভুতুড়ে পরিবেশে এই অদ্ভুত প্রাণীটিকে দুর থেকে দেখে বেশ ভয়ই পেয়ে গেলাম।
ইন্দ্রদা অদ্ভুত western style এ হাওয়া বাঁচিয়ে গোল্ড ফ্লেকটা ধরিয়ে ফেলে সন্তর্পণে আমাকে নিয়ে গাড়ির কাছে এল। হঠাৎ গাছের ডালে বসে থাকা পাখিটা কেন জানি না ভয় পেয়ে নাগরদোলার মত ঘুরতে-ঘুরতে চিরসঙ্গী আকাশের বুকে মিলিয়ে গেল। হেডলাইটের চকচকে ধারালো ফলা যেখান মাটির বুক চুম্বন করেছে সেখানে চকিতে চোখটা সরে গেল আমার ... একটা মানুষের রক্ত মাখা কাটা হাত ... তীব্র যন্ত্রণায় তখনো আঙ্গুলগুলি বাঁকানো। হঠাৎ আমার পায়ে লোমের মত কিছু একটা ঠেকল।
"ইন্দ্রদা! এই দেখ কালো লোম! তার মানে ..."
বিদ্যুতের মত ইন্দ্রদা আমার হাত থেকে টর্চটা নিয়ে সামনে ছুটে গেল... তৎপশ্চাত আমিও। অনেকটা দূরে চলে এসেও কারোর সন্ধান মিলল না। তাই আমরা যথাস্থানে ফিরে এলাম। কিন্তু একি! সেই কাটা হাতটি কোথায়? কোথায় গেল? চারদিক খুঁজলাম; কোথাও নেই।
-------------- সংগৃহীত ---------------
Special - thanks to Santanu Das (writer)
Collected from - Social Media
Collected from - Social Media

###দ্বিতীয় পর্ব খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে......
@Uronchondi @Babai_43 @Anshh3 @Ladywiththelamp @Ankita @misstti @InkyWhispers @Saurabh Dariwala @Meghnad @Oishi @Youknow @RitamRoy
Last edited: