পর্ব২
ইন্দ্রদা বলল, "দিনটা ভাল যাচ্ছে না রে সমু। এখানে থাকাটা নিরাপদ নয়। চল ঐ ডাকবাংলোটায় গিয়ে উঠি। ওখানে কেউ নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। হাতে আজ রিভলভারটাও নেই, তাই ..."
"কিন্তু ইন্দ্রদা, এ যে ভুতুড়ে কাণ্ড! কাটা হাতটা এলই বা কি করে আর অদৃশ্যই বা করল কে? তার মানে নিশ্চয়ই কোনও খুন?"
হাটতে-হাটতে প্রায় ডাকবাংলোটার কাছে এসে পড়েছি। মাঝারি E প্যাটার্নে তৈরি বাড়িটা ... একটা মেন গেট রয়েছে ... অবশ্য সেটা খোলা। আমরা ভেতরে ঢুকে এলাম। বাড়িটা থেকে তীব্র টিউব লাইটের আলো ঠিকরে আসছিল। চন্দ্রালোকিত আবছা আলোতেই বুঝতে পারছিলাম বাংলোটা বেশ পুরানো।
"কেউ আছেন? কেউ আছেন কী? Is there anybody?" ইন্দ্রদা ঢোকার দরজায় ঠক-ঠক করতে লাগল।
হঠাৎ একটা জোরালো বাতাসে দরজাটা ক্যাঁচ করে খুলে গেল। সামনেই পড়ে রয়েছে একটা মানুষের দেহ ... তবে যে ওটা মৃতদেহ নয়, তা কিছুক্ষণ পরেই বুঝলাম। মেঝেতে পড়ে থাকা লোকটা বলে উঠল, "কাকে চান আপনারা? মাঝরাতে চোখের ঘুম কেড়ে নিলেন?"
ইন্দ্রদা problem টা বুঝিয়ে বলে দিল। আশ্চর্য! লোকটা এতটুকু আপত্তি করল না! হঠাৎ লোডশেডিং ... গোটা বাংলোটাতে তখন নিশ্ছিদ্র অন্ধকার।
অপরিচিত সেই লোকটি বলে উঠল, "আমি এ বাড়ির চাকর, রামনাথ। আসুন আমার সঙ্গে।"
লোকটার গলাটা অদ্ভুত খোনা-খোনা। অন্ধকারে শরীরের বর্ণনা দেওয়া যায় না। কি এক অশনি সংকেত মনটাকে বারবার তরঙ্গায়িত করে তুলছিল। আমরা রামনাথের পেছন-পেছন চললাম। কালিমাময় এই অরণ্য বক্ষে দেশলাই খোলের মত ডাকবাংলোটায় কি আর কেউ থাকে না? এই প্রশ্নটা বারবার মনটায় কাটাকুটি করছিল।
"আচ্ছা রামনাথ এ বাড়িতে আর কে থাকে?" ইন্দ্রদার প্রশ্ন।
"থাকে বাবু, সবাই থাকে। আমিও থাকি, তারাও থাকে। ওরা সব অন্ধকারে ঘুমিয়ে থাকে।"
"মানে?"
আমরা তখনও অতল অন্ধকারে রামনাথকে অনুসরণ করছি। আমার টর্চের ব্যাটারি শেষ, তাই সেটা জ্বালানোর চেষ্টাও বৃথা।
"আপনারা এই ঘরে থাকুন, আমি আসছি।"
এই বলে রামনাথ আরও আধারে ডুবে গেল, আর আমাদের ঘরের দরজাটা কে যেন ঝাপটা দিয়ে বন্ধ করে দিল। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় চক-চক করছে ইন্দ্রদার সন্ধানী চোখ দুটো। আবছা রহস্যময় আলোয় দেখা যায়, ঘরে একটা খাট রয়েছে। চেয়ার , টেবিল, আর মাথার উপর খারাপ হয়ে যাওয়া একটা দেয়াল ঘড়ি ... কোথাও কোনও আলো বা শব্দ নেই।
"ইন্দ্রদা আমার কিন্তু ভালো লাগছে না।"
"ভালো কি আমারও লাগছে রে সমু! গাড়ির চাকা burst হওয়া, কাটা হাত অদৃশ্য হওয়া, ডাকবাংলোর জনহীন স্তব্ধতা, সবই কি কোনও রক্তচক্ষুর চাল?"
বিছানার উপর জমা এক ইঞ্চি পুরু ধুলো কোনও এক অদৃশ্য হাত আলতোভাবে পরিষ্কার করে দিয়েছে। তবে কি কেউ আগে থেকেই আমাদের আগমনের খবর জানত? আমি আর ইন্দ্রদা এই সব নানা চিন্তা করতে-করতে তক্তপোষের উপর গা এলিয়ে দিলাম।
বাইরে চাঁদটা তখন মেঘের পকেটে ঢুকে বেরোবার জন্য ছটফট করছে। দু'জনের চোখেই সজাগ দৃষ্টি, তবু মনে হচ্ছে যেন গোটা বাড়িটা এক অশুভ শক্তির মুঠোর মধ্যে চলে যাচ্ছে। মাকড়সার জালে ভর্তি জানালা দিয়ে দেখলাম বাইরে একটা রাত জাগা পাখি সভয়ে ডানা ঝাপটে উড়ে গেল। ভয় তখন ক্রমশ ভয়ংকরের দিকে ... ইন্দ্রদা পুরোপুরি silent ... নিঃশব্দে একটার পর একটা নিঃশ্বাস নিচ্ছি ... মাঝে-মাঝে থেমে যাচ্ছি। ঘরের ঘুলঘুলির দিকে চোখ যেতেই আঁতকে উঠলাম ... দুটো ক্ষুদ্র সাদাটে গোলাপি চোখ। পরে বুঝলাম ওটা একটা নচ্ছার বাদুড়। আমাদের দরজাটা এবার ক্যাঁচ করে খুলে গেল, আর তখনই একটা মিষ্টি মধুর সুগন্ধের সঙ্গে-সঙ্গে এক নারীর চাপা অট্টহাসি কানে এল। আমি আর ইন্দ্রদা দড়াম করে উঠে পড়েছি।
"কে? কে? কে ওখানে? Who is there?"
"বাবু আমি রামনাথ, মোমবাতি দেতে এসেছি।"
মোমবাতিটা রেখে চলে যেতেই দরজাটা আবার বন্ধ হয়ে গেল। আবার সেই অট্টহাসি ... কেউ কিছু একটা বলছে ... খুব টেনে-টেনে সুর করে ... হ্যাঁ স্পষ্টতই একটা নারী কণ্ঠ ... একটা আবছা ছড়া ...
না পাও খুঁজে তেরো যদি,
সাত সাগর আর বারো নদী-
পার হয়েই নামো।
নীলকমলের নীল কাঁটা আর
লালকমলের লাল কাঁটা,
নিয়ে এসেই থামো।
ক্রমশ আওয়াজ স্পষ্ট হতে থাকে ... একটা তীব্র উগ্র সেন্টের গন্ধ। ইন্দ্রদা কিছু একটা বলছিল মনে হল, কিন্তু ঘুমে আমার চোখ জড়িয়ে আসছে তখন। বারবার মনে হচ্ছিল ইন্দ্রদা ডাকছে কিন্তু তীব্র এক অবসন্নতায় তখন চোখ খুলতে পারছিলাম না।
সংগৃহীত ---------------------------

পর্ব -৩ খুব শীঘ্রই আসছে,....
ইন্দ্রদা বলল, "দিনটা ভাল যাচ্ছে না রে সমু। এখানে থাকাটা নিরাপদ নয়। চল ঐ ডাকবাংলোটায় গিয়ে উঠি। ওখানে কেউ নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। হাতে আজ রিভলভারটাও নেই, তাই ..."
"কিন্তু ইন্দ্রদা, এ যে ভুতুড়ে কাণ্ড! কাটা হাতটা এলই বা কি করে আর অদৃশ্যই বা করল কে? তার মানে নিশ্চয়ই কোনও খুন?"
হাটতে-হাটতে প্রায় ডাকবাংলোটার কাছে এসে পড়েছি। মাঝারি E প্যাটার্নে তৈরি বাড়িটা ... একটা মেন গেট রয়েছে ... অবশ্য সেটা খোলা। আমরা ভেতরে ঢুকে এলাম। বাড়িটা থেকে তীব্র টিউব লাইটের আলো ঠিকরে আসছিল। চন্দ্রালোকিত আবছা আলোতেই বুঝতে পারছিলাম বাংলোটা বেশ পুরানো।
"কেউ আছেন? কেউ আছেন কী? Is there anybody?" ইন্দ্রদা ঢোকার দরজায় ঠক-ঠক করতে লাগল।
হঠাৎ একটা জোরালো বাতাসে দরজাটা ক্যাঁচ করে খুলে গেল। সামনেই পড়ে রয়েছে একটা মানুষের দেহ ... তবে যে ওটা মৃতদেহ নয়, তা কিছুক্ষণ পরেই বুঝলাম। মেঝেতে পড়ে থাকা লোকটা বলে উঠল, "কাকে চান আপনারা? মাঝরাতে চোখের ঘুম কেড়ে নিলেন?"
ইন্দ্রদা problem টা বুঝিয়ে বলে দিল। আশ্চর্য! লোকটা এতটুকু আপত্তি করল না! হঠাৎ লোডশেডিং ... গোটা বাংলোটাতে তখন নিশ্ছিদ্র অন্ধকার।
অপরিচিত সেই লোকটি বলে উঠল, "আমি এ বাড়ির চাকর, রামনাথ। আসুন আমার সঙ্গে।"
লোকটার গলাটা অদ্ভুত খোনা-খোনা। অন্ধকারে শরীরের বর্ণনা দেওয়া যায় না। কি এক অশনি সংকেত মনটাকে বারবার তরঙ্গায়িত করে তুলছিল। আমরা রামনাথের পেছন-পেছন চললাম। কালিমাময় এই অরণ্য বক্ষে দেশলাই খোলের মত ডাকবাংলোটায় কি আর কেউ থাকে না? এই প্রশ্নটা বারবার মনটায় কাটাকুটি করছিল।
"আচ্ছা রামনাথ এ বাড়িতে আর কে থাকে?" ইন্দ্রদার প্রশ্ন।
"থাকে বাবু, সবাই থাকে। আমিও থাকি, তারাও থাকে। ওরা সব অন্ধকারে ঘুমিয়ে থাকে।"
"মানে?"
আমরা তখনও অতল অন্ধকারে রামনাথকে অনুসরণ করছি। আমার টর্চের ব্যাটারি শেষ, তাই সেটা জ্বালানোর চেষ্টাও বৃথা।
"আপনারা এই ঘরে থাকুন, আমি আসছি।"
এই বলে রামনাথ আরও আধারে ডুবে গেল, আর আমাদের ঘরের দরজাটা কে যেন ঝাপটা দিয়ে বন্ধ করে দিল। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় চক-চক করছে ইন্দ্রদার সন্ধানী চোখ দুটো। আবছা রহস্যময় আলোয় দেখা যায়, ঘরে একটা খাট রয়েছে। চেয়ার , টেবিল, আর মাথার উপর খারাপ হয়ে যাওয়া একটা দেয়াল ঘড়ি ... কোথাও কোনও আলো বা শব্দ নেই।
"ইন্দ্রদা আমার কিন্তু ভালো লাগছে না।"
"ভালো কি আমারও লাগছে রে সমু! গাড়ির চাকা burst হওয়া, কাটা হাত অদৃশ্য হওয়া, ডাকবাংলোর জনহীন স্তব্ধতা, সবই কি কোনও রক্তচক্ষুর চাল?"
বিছানার উপর জমা এক ইঞ্চি পুরু ধুলো কোনও এক অদৃশ্য হাত আলতোভাবে পরিষ্কার করে দিয়েছে। তবে কি কেউ আগে থেকেই আমাদের আগমনের খবর জানত? আমি আর ইন্দ্রদা এই সব নানা চিন্তা করতে-করতে তক্তপোষের উপর গা এলিয়ে দিলাম।
বাইরে চাঁদটা তখন মেঘের পকেটে ঢুকে বেরোবার জন্য ছটফট করছে। দু'জনের চোখেই সজাগ দৃষ্টি, তবু মনে হচ্ছে যেন গোটা বাড়িটা এক অশুভ শক্তির মুঠোর মধ্যে চলে যাচ্ছে। মাকড়সার জালে ভর্তি জানালা দিয়ে দেখলাম বাইরে একটা রাত জাগা পাখি সভয়ে ডানা ঝাপটে উড়ে গেল। ভয় তখন ক্রমশ ভয়ংকরের দিকে ... ইন্দ্রদা পুরোপুরি silent ... নিঃশব্দে একটার পর একটা নিঃশ্বাস নিচ্ছি ... মাঝে-মাঝে থেমে যাচ্ছি। ঘরের ঘুলঘুলির দিকে চোখ যেতেই আঁতকে উঠলাম ... দুটো ক্ষুদ্র সাদাটে গোলাপি চোখ। পরে বুঝলাম ওটা একটা নচ্ছার বাদুড়। আমাদের দরজাটা এবার ক্যাঁচ করে খুলে গেল, আর তখনই একটা মিষ্টি মধুর সুগন্ধের সঙ্গে-সঙ্গে এক নারীর চাপা অট্টহাসি কানে এল। আমি আর ইন্দ্রদা দড়াম করে উঠে পড়েছি।
"কে? কে? কে ওখানে? Who is there?"
"বাবু আমি রামনাথ, মোমবাতি দেতে এসেছি।"
মোমবাতিটা রেখে চলে যেতেই দরজাটা আবার বন্ধ হয়ে গেল। আবার সেই অট্টহাসি ... কেউ কিছু একটা বলছে ... খুব টেনে-টেনে সুর করে ... হ্যাঁ স্পষ্টতই একটা নারী কণ্ঠ ... একটা আবছা ছড়া ...
না পাও খুঁজে তেরো যদি,
সাত সাগর আর বারো নদী-
পার হয়েই নামো।
নীলকমলের নীল কাঁটা আর
লালকমলের লাল কাঁটা,
নিয়ে এসেই থামো।
ক্রমশ আওয়াজ স্পষ্ট হতে থাকে ... একটা তীব্র উগ্র সেন্টের গন্ধ। ইন্দ্রদা কিছু একটা বলছিল মনে হল, কিন্তু ঘুমে আমার চোখ জড়িয়ে আসছে তখন। বারবার মনে হচ্ছিল ইন্দ্রদা ডাকছে কিন্তু তীব্র এক অবসন্নতায় তখন চোখ খুলতে পারছিলাম না।
সংগৃহীত ---------------------------

পর্ব -৩ খুব শীঘ্রই আসছে,....